সংসদীয় গণতন্ত্র একটি রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থা, যেখানে দেশের জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত সংসদ বা পার্লামেন্ট সরকারের প্রধান প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে। এই ব্যবস্থায় সরকারপ্রধান বা প্রধানমন্ত্রী সাধারণত সংসদীয় নির্বাচনে বিজয়ী দলের নেতা হন এবং সরকারের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এটি বিশ্বের অনেক দেশে প্রচলিত একটি জনপ্রিয় শাসনব্যবস্থা, যা জনগণের অধিকার ও মতামতকে প্রতিফলিত করে। আজকে আমরা সংসদীয় গণতন্ত্রের জনক কে? আধুনিক গণতন্ত্রের জনক কে? ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করবো।

সংসদীয় গণতন্ত্রের সংজ্ঞা | সংসদীয় গণতন্ত্র কাকে বলে?
সংসদীয় গণতন্ত্র (Parliamentary Democracy) হলো এমন একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে নির্বাহী ও আইনসভা একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে, যারা সংসদে বসে আইন প্রণয়ন করে এবং সরকারের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। প্রধানমন্ত্রী সংসদের প্রতি জবাবদিহিতার মাধ্যমে সরকারের কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং প্রয়োজনে সংসদের আস্থা হারালে তাকে পদত্যাগ করতে হয়।
সংসদীয় গণতন্ত্রের জনক কে? সংসদের গণতন্ত্রের জনক কে?
সংসদীয় গণতন্ত্রের জনক কে: সংসদীয় গণতন্ত্রের জনক হিসেবে জন লক (John Locke)-কে ধরা হয়। তিনি একজন ইংরেজ দার্শনিক ছিলেন এবং তার রাজনৈতিক তত্ত্বগুলো আধুনিক গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কেন জন লককে সংসদীয় গণতন্ত্রের জনক বলা হয়?
স্বাভাবিক অধিকার ও সমাজ চুক্তির তত্ত্ব:
- জন লক তার রাজনৈতিক তত্ত্বে বলেন, মানুষ জন্মগতভাবেই স্বাধীন এবং সমান। তার মতে, প্রত্যেকের জীবনের স্বাধীনতা, সম্পত্তি, এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের অধিকার জন্মগত।
- তিনি সমাজ চুক্তির (Social Contract) ধারণা উপস্থাপন করেন, যেখানে মানুষ স্বেচ্ছায় একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে এবং রাষ্ট্রকে ক্ষমতা প্রদান করে। তবে, যদি রাষ্ট্র জনগণের অধিকার লঙ্ঘন করে, তবে জনগণ রাষ্ট্রকে ক্ষমতাচ্যুত করার অধিকার রাখে।
নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব ও সরকারে সীমিত ক্ষমতার ধারণা:
- জন লক বিশ্বাস করতেন যে, শাসকদের ক্ষমতা সীমিত থাকতে হবে এবং জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া উচিত। এই ধারণাই সংসদীয় গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি, যেখানে সংসদ হলো জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান এবং সেখানে জনগণের স্বার্থ রক্ষায় আইন প্রণয়ন ও সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
জনগণের ইচ্ছার প্রাধান্য:
- তিনি গণতন্ত্রের মূলনীতির ওপর জোর দেন, যা জনগণের ইচ্ছা ও মতামতকে শাসনব্যবস্থার কেন্দ্রে স্থাপন করে। জন লকের এই তত্ত্বগুলি ১৬৮৮ সালের ইংল্যান্ডের গৌরবময় বিপ্লব এবং পরবর্তী সময়ে বিল অব রাইটস (Bill of Rights) প্রণয়নে প্রভাবিত করে, যা আধুনিক সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করে।
সংসদীয় গণতন্ত্রের জনক কে: জন লকের রাজনৈতিক তত্ত্ব ও দর্শন ইউরোপে গণতন্ত্রের ভিত্তি গড়ে তুলতে সহায়ক ছিল এবং তার মতাদর্শকে ভিত্তি করেই আজকের আধুনিক সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারণা গড়ে উঠেছে। এজন্য তাকে সংসদীয় গণতন্ত্রের জনক হিসেবে সম্মানিত করা হয়।
আধুনিক গণতন্ত্রের জনক কে?
সংসদীয় গণতন্ত্রের জনক কে নিয়ে জেনেছি। আধুনিক গণতন্ত্রের জনক হিসেবে সাধারণত জন লক (John Locke) এবং জিন-জাক রুশো (Jean-Jacques Rousseau)-কে উল্লেখ করা হয়। উভয়েই তাদের রাজনৈতিক দর্শন এবং তত্ত্বের মাধ্যমে আধুনিক গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
১. জন লক (John Locke)
- স্বাভাবিক অধিকার ও সমাজ চুক্তি: জন লক তার তত্ত্বে বলেছেন যে, মানুষের জন্মগত অধিকার হলো জীবন, স্বাধীনতা, এবং সম্পত্তি। তিনি সমাজ চুক্তির ধারণা উপস্থাপন করেন, যা রাষ্ট্রের ভিত্তি এবং জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য সরকারকে প্রতিষ্ঠিত করে।
- গণতন্ত্রের ভিত্তি: লক বিশ্বাস করতেন যে জনগণের ইচ্ছা ও মতামত সরকার পরিচালনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার ধারণা আধুনিক গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি স্থাপন করেছে।
২. জিন-জাক রুশো (Jean-Jacques Rousseau)
- জনসাধারণের স্বার্থ: রুশো তার বই “দ্য সোশিয়াল কনট্র্যাক্ট” এ বলেন যে, সরকার জনগণের জন্য কাজ করতে হবে এবং সমাজের সাধারণ ইচ্ছার প্রতিনিধিত্ব করতে হবে।
- গণতন্ত্রের আদর্শ: তিনি জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে গণতন্ত্রের আদর্শকে সমর্থন করেন, যা আধুনিক গণতন্ত্রের কার্যক্রমের মূল স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আধুনিক গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠায় জন লক ও জিন-জাক রুশো উভয়েই মৌলিক ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের তত্ত্ব ও দর্শনগুলি রাজনৈতিক চিন্তাধারার বিকাশে অবদান রেখেছে এবং আজকের গণতান্ত্রিক সমাজের ভিত্তি স্থাপন করেছে।
আরও পড়ুন: কম্পিউটারের জনক কে? আধুনিক কম্পিউটারের জনক কে?
সংসদীয় গণতন্ত্রের মূল বৈশিষ্ট্য
সংসদীয় গণতন্ত্রের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা এই শাসনব্যবস্থাকে অন্যান্য শাসনব্যবস্থা থেকে আলাদা করে। সেগুলো হলো:
- সংসদের উচ্চ ক্ষমতা ও প্রাধান্য: সংসদই দেশের প্রধান আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান। সরকারের কার্যকলাপ ও নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংসদ সরাসরি ভূমিকা পালন করে।
- প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা: সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রধানমন্ত্রী সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং মন্ত্রিসভা নিয়ে সরকারের নীতি ও কার্যক্রম পরিচালনা করেন। প্রধানমন্ত্রী সংসদ থেকে নির্বাচিত এবং সংসদের আস্থাভাজন হতে হয়।
- দ্বিসভাক্রমিক সংসদ: অনেক দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র দ্বিসভাক্রমিক অর্থাৎ দুটি কক্ষ নিয়ে গঠিত – একটি উচ্চ কক্ষ (Upper House) ও একটি নিম্ন কক্ষ (Lower House)। নিম্ন কক্ষের প্রতিনিধিরা সরাসরি নির্বাচিত হন এবং উচ্চ কক্ষের সদস্যরা কখনো কখনো মনোনীত হতে পারেন।
- নির্বাচনী ব্যবস্থা: সংসদীয় গণতন্ত্রে নিয়মিত বিরতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যাতে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে সংসদে প্রেরণ করে। এই নির্বাচনী প্রক্রিয়া জনগণের মতামত প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি করে এবং গণতন্ত্রের মূলনীতিকে সুরক্ষিত রাখে।
- সরকারের জবাবদিহিতা: প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা সংসদের কাছে জবাবদিহি। যদি সংসদের আস্থা হারান, তাহলে প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হয় এবং নতুন সরকার গঠন করা হয়।
- মতামতের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার: সংসদীয় গণতন্ত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার সংরক্ষিত থাকে। জনগণ তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে এবং সরকারের সমালোচনা করার অধিকার রাখে।
সংসদীয় গণতন্ত্রের উৎপত্তি কোথায়?
সংসদীয় গণতন্ত্রের উৎপত্তি ব্রিটেনে (বর্তমান যুক্তরাজ্য) হয়েছে। এটি মূলত মধ্যযুগের ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থা থেকে বিকশিত হয়েছে এবং ধীরে ধীরে আধুনিক সংসদীয় শাসনব্যবস্থার রূপ নিয়েছে।
উৎপত্তি ও বিকাশ:
- ম্যাগনা কার্টা (১২১৫):
- সংসদীয় গণতন্ত্রের উৎপত্তির ইতিহাস শুরু হয় ১২১৫ সালে, যখন ইংল্যান্ডের রাজা জন “ম্যাগনা কার্টা” (Magna Carta) নামে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। এই চুক্তির মাধ্যমে রাজাদের ক্ষমতা সীমিত করা হয় এবং নাগরিকদের কিছু মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়। এটি ছিল ইংল্যান্ডে শাসকদের বিরুদ্ধে জনগণের প্রথম সফল সংগ্রাম, যা পরবর্তীতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করে।
- পার্থামেন্টের প্রতিষ্ঠা (১৩০০-এর দশক):
- ১৩০০ শতকের দিকে ইংল্যান্ডে পার্লামেন্ট বা সংসদের ধারণা প্রতিষ্ঠা পায়। তখনকার সময়ে রাজা তার রাজকোষ পরিচালনা ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর পরামর্শ নেওয়ার জন্য জমিদার ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিয়ে সভা বসাতেন। এই সভাকেই পরবর্তীতে পার্লামেন্ট বলা হয়।
- পার্লামেন্ট দুটি কক্ষে বিভক্ত ছিল: হাউস অব লর্ডস (উচ্চকক্ষ) এবং হাউস অব কমন্স (নিম্নকক্ষ)। হাউস অব লর্ডসে জমিদার ও উচ্চবিত্তরা এবং হাউস অব কমন্সে সাধারণ মানুষ ও প্রতিনিধিরা বসতেন।
- গৌরবময় বিপ্লব (১৬৮৮):
- ১৬৮৮ সালের গৌরবময় বিপ্লবের (Glorious Revolution) মাধ্যমে ইংল্যান্ডে রাজতন্ত্রের ক্ষমতা অনেকাংশে সীমিত হয়ে যায় এবং পার্লামেন্টের ক্ষমতা বাড়ানো হয়। এটি একটি শান্তিপূর্ণ বিপ্লব ছিল, যার ফলে রাজা দ্বিতীয় জেমস ক্ষমতা হারান এবং তার স্থলাভিষিক্ত হন উইলিয়াম ও মেরি।
- এই বিপ্লবের পর ইংল্যান্ডে সংবিধানিক রাজতন্ত্র (Constitutional Monarchy) প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে রাজা বা রানী ক্ষমতায় থাকলেও প্রকৃত ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকে।
- বিল অব রাইটস (১৬৮৯):
- গৌরবময় বিপ্লবের পর ১৬৮৯ সালে বিল অব রাইটস (Bill of Rights) পাস হয়, যা রাজতন্ত্রের ক্ষমতা সীমিত করে এবং সংসদের ভূমিকা প্রতিষ্ঠা করে। এর মাধ্যমে পার্লামেন্টের ক্ষমতা ও জনগণের অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
- এই বিলের মাধ্যমে পার্লামেন্টে আইন প্রণয়ন ও কর আরোপের পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং রাজা বা রানীকে সংসদের অনুমতি ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।
বিশ্বের অন্যান্য দেশে বিস্তার:
সংসদীয় গণতন্ত্রের উৎপত্তি যদিও ইংল্যান্ডে, তবে এর জনপ্রিয়তা দ্রুত অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ এবং বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
- যুক্তরাজ্যের ঔপনিবেশিক প্রভাব:
- যুক্তরাজ্যের ঔপনিবেশিক শাসনের মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্রের মডেল ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, এবং বাংলাদেশসহ অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এই দেশগুলোর স্বাধীনতার পরেও তারা ব্রিটিশ সংসদীয় শাসনব্যবস্থা অনুসরণ করে।
- অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ:
- ইউরোপের অন্যান্য দেশ যেমন জার্মানি, নরওয়ে, সুইডেন এবং নেদারল্যান্ডসও সংসদীয় গণতন্ত্রের শাসনব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এসব দেশে সংসদীয় ব্যবস্থা ভিন্ন ভিন্ন রূপে বিকশিত হয়েছে।
সংসদীয় গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি ছিল ব্রিটিশ রাজনৈতিক ইতিহাসে। মধ্যযুগে ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে যে ক্ষমতার লড়াই চলেছে, তার ফলশ্রুতিতে গণতন্ত্রের এই মডেল বিকশিত হয়েছে। পরে এটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রূপে গ্রহণ করা হয়। আজকের যুগে সংসদীয় গণতন্ত্র একটি শক্তিশালী ও জনপ্রিয় শাসনব্যবস্থা, যা জনগণের অংশগ্রহণ ও মতামতের গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে।
সংসদীয় গণতন্ত্রের গুরুত্ব
সংসদীয় গণতন্ত্রের গুরুত্ব ও প্রভাব অনেক বেশি, কারণ এটি জনগণের মতামতকে সরাসরি প্রতিফলিত করে এবং তাদের স্বার্থ রক্ষা করে। এর মাধ্যমে দেশ পরিচালনার প্রতিটি স্তরে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। সংসদীয় গণতন্ত্রের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো:
- জনগণের অংশগ্রহণ: সংসদীয় গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো জনগণের অংশগ্রহণ। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে এবং সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এটি জনগণের ইচ্ছা ও মতামতকে প্রাধান্য দেয়।
- জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা: সংসদীয় গণতন্ত্রে সরকার সংসদের কাছে জবাবদিহি, যা সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নিশ্চয়তা দেয়। জনগণ জানতে পারে, সরকারের কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং তাদের প্রতিনিধি কীভাবে তাদের পক্ষে কাজ করছেন।
- রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: সংসদীয় গণতন্ত্র রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক। এ ব্যবস্থায় ক্ষমতার হস্তান্তর প্রক্রিয়া সাধারণত শান্তিপূর্ণ হয়, কারণ এটি জনগণের ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়।
- মত প্রকাশের স্বাধীনতা: সংসদীয় গণতন্ত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়। জনগণ তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে এবং সরকারের কাজের সমালোচনা করতে পারে। এটি একটি স্বাধীন ও সক্রিয় নাগরিক সমাজ গঠনে সহায়তা করে।
সংসদীয় গণতন্ত্রের সুবিধা
সংসদীয় গণতন্ত্রের অনেক সুবিধা রয়েছে, যা এটিকে অন্যান্য শাসনব্যবস্থা থেকে আলাদা করে তোলে। সেগুলো হলো:
- প্রতিনিধিত্বমূলক শাসন: সংসদীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি নির্বাচন হয় এবং তারা জনগণের ইচ্ছা ও স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করেন।
- সহজে ক্ষমতার পরিবর্তন: নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন সহজে ও শান্তিপূর্ণভাবে হয়, যা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।
- জবাবদিহিতা: সংসদীয় গণতন্ত্রে সরকার সংসদের কাছে জবাবদিহি থাকে, যা জনগণের স্বার্থ রক্ষা ও দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
- নিয়মিত নির্বাচন: নিয়মিত নির্বাচন জনগণের মতামত জানার সুযোগ তৈরি করে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সুরক্ষিত রাখে।
সংসদীয় গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ
সংসদীয় গণতন্ত্রে অনেক সুবিধা থাকলেও কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এগুলো হলো:
- জটিল সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া: সংসদীয় গণতন্ত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া কখনো কখনো দীর্ঘ হয়, কারণ এটি বিভিন্ন স্তরের আলোচনার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
- রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বন্দ্ব: বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যকার দ্বন্দ্ব সংসদীয় কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। কখনো কখনো দলীয় সংকীর্ণতার কারণে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া দুষ্কর হয়।
- দুর্নীতি: দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা, যা সংসদীয় গণতন্ত্রকে দুর্বল করতে পারে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে দুর্নীতি থাকলে জনগণের আস্থা হারিয়ে যায়।
- সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব: কখনো কখনো সংসদীয় গণতন্ত্রে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব সঠিকভাবে হয় না, যা তাদের অধিকার বঞ্চিত করে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশ একটি সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশ, যেখানে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের সংবিধান অনুযায়ী, জনগণ প্রতি ৫ বছর পর জাতীয় সংসদের জন্য সরাসরি ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করে। এখানে প্রধানমন্ত্রী দেশের সরকারপ্রধান এবং রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও জনগণের অংশগ্রহণ এবং রাজনৈতিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
সংসদীয় গণতন্ত্র এমন একটি শাসনব্যবস্থা, যা জনগণের ইচ্ছা ও মতামতকে প্রতিফলিত করে এবং সরকারকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসে। এটি একটি স্বচ্ছ ও ন্যায়সঙ্গত শাসনব্যবস্থা, যা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক। যদিও এর কিছু সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তারপরও এটি জনগণের অংশগ্রহণ ও অধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী পদ্ধতি। তাই সংসদীয় গণতন্ত্রের উন্নয়নের জন্য সঠিকভাবে নির্বাচন পরিচালনা, রাজনৈতিক সংস্কৃতি গঠন, এবং জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।