দরুদ শরীফ হলো ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া বা প্রার্থনা, যা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি আশীর্বাদ এবং শান্তি প্রার্থনা করা হয়। ইসলামে দরুদ পাঠের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে এবং এটি একটি পবিত্র প্রথা যা নবী (সাঃ)-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। মুসলমানরা বিভিন্ন উপলক্ষে দরুদ শরীফ পাঠ করেন এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ নেয়ামত লাভের প্রত্যাশা করেন। দরুদ পাঠের মাধ্যমে মানুষের আত্মা পবিত্র হয় এবং আল্লাহর কাছ থেকে রহমত ও ক্ষমা লাভ হয়। আজকে আমরা দরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ | দূরুদ শরিফ আরবি ও বাংলা এর ফজিলত, গুরুত্ব ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করব।

দরুদ শরীফের বাংলা উচ্চারণ
আত্তাহিয়াতু যেমন নামাজের গুরুত্ব তেমনি দূরূদ শরীফও নামাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দরুদ শরীফের বিভিন্ন রূপ রয়েছে, তবে এখানে অন্যতম জনপ্রিয় দরুদ শরীফের বাংলা উচ্চারণ এবং অর্থ দেওয়া হলো:
দরুদে ইব্রাহিম বাংলা উচ্চারণ ও অনুবাদ
দরুদে ইব্রাহিম হলো সবচেয়ে প্রচলিত এবং পূর্ণাঙ্গ দরুদ শরীফ। নামাজের মধ্যে তাশাহুদের পর এটি পাঠ করা হয়।
দরুদে ইব্রাহিমের বাংলা উচ্চারণ:
“আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মজিদ।
আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মজিদ।”
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ (সাঃ) এবং তাঁর বংশধরদের উপর শান্তি বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইব্রাহিম (আঃ) এবং তাঁর বংশধরদের উপর শান্তি বর্ষণ করেছেন। আপনি প্রশংসার যোগ্য এবং মহিমাময়।
হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ (সাঃ) এবং তাঁর বংশধরদের বরকত দিন, যেমন আপনি ইব্রাহিম (আঃ) এবং তাঁর বংশধরদের বরকত দিয়েছেন। আপনি প্রশংসার যোগ্য এবং মহিমাময়।”
দরুদ শরীফ (দরুদে ইব্রাহিম) আরবি:
اللهم صل على محمد وعلى آل محمد، كما صليت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم، إنك حميد مجيد.
اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد، كما باركت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم، إنك حميد مجيد.
ছোট দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ
ছোট দরুদ শরীফ হলো সংক্ষিপ্ত কিন্তু অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ দরুদ। এটি দ্রুত পাঠ করা যায় এবং নিয়মিত পাঠ করার জন্য সুপারিশ করা হয়।
ছোট দরুদ শরীফের বাংলা উচ্চারণ:
“সাল্লাল্লাহু আলা মুহাম্মাদ, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”
অর্থ: “মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক এবং তাঁর প্রতি শান্তি ও আশীর্বাদ বর্ষিত হোক।”
এই দরুদ শরীফ ছোট এবং সহজ, তাই এটি প্রতিদিন অনেকবার পাঠ করা যায় এবং এটি আল্লাহর রহমত লাভের জন্য খুবই উপকারী।
দূরুদে নূর বাংলা ও অর্থ
দরুদে নূর হলো আরেকটি দরুদ শরীফ, যা ইসলামে বিশেষভাবে সম্মানিত।
দরুদে নূরের বাংলা উচ্চারণ:
“আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা নূরি-ল-আনওয়ারি ওয়া সিররি-ল-আসরারি ওয়া তিরইয়াকি-ল-আগিয়াতি ওয়া মিফতিহি-বাবি-রাহমাতি”
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি সেই মহান নূরের প্রতি দরুদ পাঠান, যিনি সমস্ত আলো এবং রহস্যের মধ্যে রয়েছেন, এবং যিনি সমস্ত রোগের নিরাময়কারী ও রহমতের দরজার চাবিকাঠি।”
সবগুলো দরুদ শরীফ বাংলা | দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ pdf
ইসলামে দরুদ শরীফ নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি দোয়া ও আশীর্বাদ পাঠ করার একটি বিশেষ দোয়া। এখানে উল্লেখযোগ্য কিছু দরুদ শরীফের বাংলা উচ্চারণ এবং অর্থ তুলে ধরা হলো:
১. দরুদে ইব্রাহিম
দরুদে ইব্রাহিম নামাজের মধ্যে তাশাহুদের পরে পাঠ করা হয়। এটি সবচেয়ে পরিচিত দরুদ শরীফ।
বাংলা উচ্চারণ:
“আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মজিদ।
আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মজিদ।”
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ (সাঃ) এবং তাঁর পরিবারবর্গের ওপর শান্তি বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইব্রাহিম (আঃ) এবং তাঁর পরিবারবর্গের ওপর শান্তি বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসার যোগ্য এবং মহিমাময়।
হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ (সাঃ) এবং তাঁর পরিবারবর্গের ওপর বরকত দিন, যেমন আপনি ইব্রাহিম (আঃ) এবং তাঁর পরিবারবর্গের ওপর বরকত দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসার যোগ্য এবং মহিমাময়।”
২. দরুদে তুনজিনা
দরুদে তুনজিনা বিশেষ দরুদ, যা বিভিন্ন বিপদ থেকে মুক্তির জন্য পাঠ করা হয়।
বাংলা উচ্চারণ:
“আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন সালাতান তুনজিনা বিহা মিন জামিয়িল আহওয়ালিওয়াল আফাতি, ওয়াতাকদ্বি লানা বিহা জামিয়াল হাজাতি, ওয়াতুতাহিরুনা বিহা মিন জামিয়িস সাইয়িয়াতি, ওয়াতারফাউনা বিহা ইনদাকা আলাদ্দারাজাতি, ওয়াতুবাল্লিগুনা বিহা আকসাল গায়াতি মিন জামিয়িল খায়রাতি ফিল হায়াতি ওয়া বাদাল মামাতি।”
অর্থ: “হে আল্লাহ! আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করুন, যা আমাদের সকল বিপদ এবং সমস্যার থেকে মুক্ত করবে, আমাদের প্রয়োজন মেটাবে, আমাদের পাপ থেকে পবিত্র করবে, আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করবে এবং সমস্ত কল্যাণে পৌঁছাবে, জীবনের মধ্যেও এবং মৃত্যুর পরেও।”
৩. দরুদে নূর
দরুদে নূর একটি পবিত্র দরুদ শরীফ, যা বিশেষভাবে নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নূরের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য পাঠ করা হয়।
বাংলা উচ্চারণ:
“আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা নূরি-ল-আনওয়ারি ওয়া সিররি-ল-আসরারি ওয়া তিরইয়াকি-ল-আগিয়াতি ওয়া মিফতিহি-বাবি-রাহমাতি”
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি সেই মহান নূরের প্রতি দরুদ পাঠান, যিনি সমস্ত আলো এবং রহস্যের মধ্যে রয়েছেন, এবং যিনি সমস্ত রোগের নিরাময়কারী ও রহমতের দরজার চাবিকাঠি।”
৪. দরুদে দাওয়াম
দরুদে দাওয়াম দীর্ঘস্থায়ী দরুদ হিসেবে পরিচিত, যা নিয়মিতভাবে পাঠ করার জন্য উৎসাহিত করা হয়।
বাংলা উচ্চারণ:
“আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন সালাতান দাবিমাতান মাকবুলাতান তুওফি বিহা জামিআল হাজাতি, ওয়াতুতাহিরুনা বিহা মিন জামিয়িস সাইয়িয়াতি, ওয়াতুকাদ্দি লানা বিহা জামিয়াল হাজাতি, ওয়া তুবাল্লিগুনা বিহা আকসাল গায়াতি মিন জামিয়িল খায়রাতি ফিল হায়াতি ওয়াবা’দাল মামাতি।”
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এবং তাঁর পরিবারবর্গের প্রতি দীর্ঘস্থায়ী দরুদ পাঠ করুন, যা আমাদের সমস্ত প্রয়োজন পূরণ করবে, আমাদের পাপ থেকে পবিত্র করবে এবং আমাদের জীবনের সর্বোচ্চ কল্যাণ প্রদান করবে।”
৫. দরুদে মুগীর
দরুদে মুগীর ছোট একটি দরুদ শরীফ, যা দ্রুত পাঠ করা যায় এবং বরকতময়।
বাংলা উচ্চারণ:
“আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন সালাতান তাঙ্গিনাল মুগীরাতি”
অর্থ: “হে আল্লাহ! মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করুন যা সকল সংকট থেকে আমাদের রক্ষা করবে।”
দরুদ শরীফ বিভিন্ন রূপে পাঠ করা যায়, এবং প্রতিটি দরুদের নিজস্ব ফজিলত ও গুরুত্ব রয়েছে। এসব দরুদ শরীফের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়, এবং নবী করিম (সাঃ)-এর প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা প্রকাশ করা যায়। নিয়মিত দরুদ শরীফ পাঠ করলে আধ্যাত্মিক শান্তি এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সহজ হয়।
দরুদ শরীফের গুরুত্ব
ইসলামে দরুদ শরীফ পাঠ করার বিশেষ ফজিলত এবং বরকত রয়েছে। নবী করিম (সাঃ)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করার মাধ্যমে মুসলমানরা তার প্রতি ভালোবাসা, সম্মান এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। কোরআনেও আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন যে, তিনি এবং তার ফেরেশতারা নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করেন এবং বিশ্বাসীদেরও তা করতে আদেশ দিয়েছেন:
“নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতারা নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করেন। হে মুমিনগণ, তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠ করো।”
— (সূরা আল-আহযাব, ৩৩:৫৬)
দরুদ শরীফ পাঠের ফজিলত
দরুদ শরীফ পাঠ করলে যে ফজিলত এবং সওয়াব লাভ হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- আল্লাহর নৈকট্য লাভ: দরুদ শরীফ পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে বিশেষ নেয়ামত ও রহমত লাভ করা যায়।
- গুনাহ থেকে মুক্তি: দরুদ পাঠের মাধ্যমে পূর্বের গুনাহ মাফ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
- নবী (সাঃ)-এর সুপারিশ: যারা দরুদ পাঠ করেন, নবী করিম (সাঃ) কেয়ামতের দিন তাদের জন্য সুপারিশ করবেন।
- অন্তরের প্রশান্তি: দরুদ শরীফ পাঠ করলে মানুষের অন্তর শান্তি লাভ করে এবং আত্মা পবিত্র হয়।
দরুদ পাঠের ফজিলত সংক্রান্ত হাদিস
হাদিসে নবী করিম (সাঃ) দরুদ শরীফের ফজিলত ও গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন। কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিস নিচে উল্লেখ করা হলো:
- রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি একবার আমার উপর দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটি রহমত নাজিল করবেন, তার দশটি গুনাহ মাফ করবেন এবং তার মর্যাদা দশ গুণ বৃদ্ধি করবেন।” — (সহিহ মুসলিম)
- “কেয়ামতের দিন আমার নিকটতম সেই ব্যক্তি হবে, যে সবচেয়ে বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করেছে।” — (তিরমিজি)
যেভাবে দরুদ শরিফ পাঠ করলে দোয়া কবুল হয়
দরুদ শরিফ পাঠ করার মাধ্যমে দোয়া কবুল হওয়ার ফজিলত সম্পর্কে ইসলামি শিক্ষায় অনেক উৎসাহিত করা হয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, কোনো মুমিন যদি আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করে এবং সেই দোয়ার আগে ও পরে দরুদ শরিফ পাঠ করে, তাহলে সেই দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
১. দোয়ার আগে ও পরে দরুদ শরিফ পাঠ করা:
- দোয়া করার সময় প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা এবং নবী করিম (সাঃ)-এর প্রতি দরুদ শরিফ পাঠ করা উচিত। যেমন:
- দোয়া শুরুর আগে: “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ।”
- এরপর নিজের চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী দোয়া করা।
- দোয়ার শেষে আবার দরুদ শরিফ: “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ।” এভাবে দোয়া শুরুর আগে ও শেষে দরুদ পাঠ করলে, আল্লাহর কাছে সেই দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
২. খুব একাগ্রতার সঙ্গে দরুদ পাঠ করা:
- দরুদ শরিফ পাঠ করার সময় মনোযোগ, একাগ্রতা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে নবী করিম (সাঃ)-এর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা থাকতে হবে। এটি আল্লাহর কাছে দরুদ ও দোয়ার গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়।
৩. শুদ্ধভাবে দরুদ শরিফ পাঠ করা:
- দরুদ শরিফের সঠিক উচ্চারণ ও শুদ্ধতার প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত। ভুলভাবে উচ্চারণ করলে এর ফজিলত কমে যেতে পারে। তাই দরুদ পাঠ করার আগে উচ্চারণ শিখে নেওয়া উত্তম।
৪. দরুদ শরিফ পাঠের নিয়মিততা:
- নিয়মিতভাবে দরুদ শরিফ পাঠ করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রতিদিন আমার প্রতি ১০ বার দরুদ পাঠ করে, সে কেয়ামতের দিন আমার নিকটবর্তী হবে।” এভাবে দরুদ শরিফের প্রতি নিয়মিততা বজায় রেখে দোয়া করলে আল্লাহর রহমত লাভ করা সহজ হয়।
৫. নবী (সাঃ)-এর প্রতি ভালোবাসা:
- দরুদ পাঠের সময় নবী করিম (সাঃ)-এর প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা থাকা দরকার। নবীর প্রতি ভালোবাসা ও সম্মানের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে দোয়া গ্রহণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
দোয়া কবুল হওয়ার জন্য দরুদ শরিফ পাঠের ফজিলত ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দোয়ার আগে ও পরে দরুদ শরিফ পাঠ করলে, আল্লাহ সেই দোয়া কবুল করতে বেশি আগ্রহী হন। এছাড়াও দরুদ শরিফের মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে রহমত ও বরকত লাভ করা যায়, যা মানুষের জীবনকে কল্যাণময় করে।
নামাজে দুরুদ না পড়লে কী হয়?
নামাজে দুরুদ পড়ার গুরুত্ব ইসলামিক ইবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নামাজের শেষের দিকে তাশাহহুদ বা আত্তাহিয়াতু পড়ে, এরপর দুরুদ পাঠ করা সুন্নত এবং গুরুত্বপূর্ণ। দুরুদ হচ্ছে আল্লাহর উপর শান্তি ও বরকত প্রার্থনা করা, যা হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যম।
- দুরুদ পড়া সুন্নত
দুরুদ নামাজের মধ্যে সুন্নত (প্রথমে নবী (সা.)-এর প্রতি শ্রদ্ধা এবং দয়া দিয়ে পাঠ করা) এবং আল্লাহর উপর শান্তি ও বরকত প্রার্থনা করার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নামাজে দুরুদ না পড়লেও নামাজ মোকারমা (সঠিক) হবে, তবে এটি সুন্নত ছেড়ে দেওয়া হবে। - নামাজের সঠিকতা
ইসলামী ঐতিহ্য অনুযায়ী, নামাজের মধ্যে দুরুদ পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও, যদি কোন কারণে কেউ দুরুদ না পড়ে, তবে তার নামাজ প্রতিবন্ধক বা বাতিল হবে না। নামাজটি সঠিক হবে তবে এটি একটি সুন্নত (অতিরিক্ত ভালো কাজ) ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। - নামাজে পূর্ণ ফজিলত অর্জিত হবে না
দুরুদ না পড়লে নামাজের পূর্ণ ফজিলত (আলাদা পুরস্কার) লাভ করা সম্ভব নয়। দুরুদ একটি অতিরিক্ত বরকত এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার একটি উপায়, যা নামাজের পরিপূর্ণতা যোগ করে। - বিভিন্ন হাদিসের ভিত্তিতে দুরুদের গুরুত্ব:
হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি আমার উপর দুরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তাকে শান্তি দান করবেন।” (সাহিহ মুসলিম)
নামাজের মধ্যে দুরুদ না পড়লে নামাজ মোকারমা হবে, অর্থাৎ তা বাতিল হবে না, কিন্তু দুরুদ একটি সুন্নত যা না পড়লে পূর্ণ পুরস্কার এবং বরকত পাওয়া সম্ভব নয়। তাই নামাজে দুরুদ পড়া বিশেষভাবে সুন্নত এবং এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নবী (সা.)-এর প্রতি শ্রদ্ধার প্রদর্শন।
উপসংহার
দরুদ শরীফ ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং পূণ্যের কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি নবী করিম (সাঃ)-এর প্রতি আমাদের ভালোবাসা, সম্মান এবং দোয়া প্রকাশ করে। দরুদ পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত এবং নেয়ামত লাভ করা যায়। বাংলাভাষী মুসলমানরা দরুদ শরীফের বাংলা উচ্চারণ শিখে নিয়মিতভাবে দরুদ পাঠ করলে তা তাদের আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য সহায়ক হবে।