কম্পিউটার আধুনিক জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি একটি শক্তিশালী যন্ত্র যা আমাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমে বিপ্লব এনেছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ সহজতর করেছে। যদিও আমরা এখন যে কম্পিউটারগুলো ব্যবহার করি তা প্রযুক্তিগতভাবে অত্যন্ত উন্নত, এর উৎপত্তি কিন্তু বহু পুরনো। এই আর্টিকেলে আমরা কম্পিউটার কি, কম্পিউটারের উৎপত্তি, প্রকারভেদ এবং তার নানা দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

কম্পিউটার কি? কম্পিউটার কাকে বলে? সংজ্ঞা
কম্পিউটার হলো একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা ডেটা ইনপুট হিসেবে গ্রহণ করে, সেই ডেটাকে প্রক্রিয়াজাত করে এবং আউটপুট আকারে ফলাফল প্রদান করে। এটি দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে গাণিতিক ও লজিক্যাল কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম। কম্পিউটার ডেটা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে, ব্যবহারকারীর জন্য সহজ উপায়ে তথ্য সরবরাহ করে এবং বিভিন্ন জটিল কাজ সম্পন্ন করতে পারে।
আবার বলা যায়, কম্পিউটার হলো একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা ডেটা গ্রহণ করে, প্রক্রিয়াজাত করে এবং ফলাফল প্রদান করে। এটি গাণিতিক ও লজিক্যাল কাজ দ্রুত ও নির্ভুলভাবে সম্পাদন করতে সক্ষম। কম্পিউটার তথ্য বা ডেটা ইনপুট হিসেবে গ্রহণ করে, তা প্রক্রিয়া করে আউটপুট আকারে ফলাফল দেখায় এবং প্রয়োজনে সেই তথ্য সংরক্ষণ করে।
বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও গবেষক কম্পিউটার সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন, যা কম্পিউটারের গুরুত্ব এবং তার বৈশিষ্ট্যগুলি উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরে। এখানে কিছু প্রখ্যাত বিজ্ঞানী এবং তাদের কম্পিউটার সম্পর্কিত বক্তব্য তুলে ধরা হলো:
১. চার্লস ব্যাবেজ (Charles Babbage):
চার্লস ব্যাবেজকে “কম্পিউটারের পিতা” হিসেবে অভিহিত করা হয়, কারণ তিনি প্রথম অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিন তৈরি করেছিলেন যা আধুনিক কম্পিউটারের ধারণার ভিত্তি ছিল।
“কম্পিউটার, যদি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, তাহলে মানব মস্তিষ্কের ক্ষমতার চেয়েও দ্রুত এবং সঠিকভাবে কাজ করতে সক্ষম হবে।”
২. এলান টিউরিং (Alan Turing):
এলান টিউরিং ছিলেন গাণিতিক বিজ্ঞানী এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি টিউরিং মেশিন আবিষ্কার করেন, যা আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং অ্যালগরিদমের ভিত্তি।
“যে কাজটি মানুষ করতে পারে, তা যদি একটি কম্পিউটার সঠিকভাবে শিখে, তবে সে কাজটি কম্পিউটারও করতে পারবে।”
৩. স্টিভ জবস (Steve Jobs):
এটি সবাই জানেন যে স্টিভ জবস অ্যাপল কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা, যিনি আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তি এবং ডিভাইসের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
“কম্পিউটারগুলি শুধুমাত্র মানুষের কাজকে আরও সহজ এবং দ্রুত করতে সাহায্য করে না, তারা আমাদের জীবনকে নতুনভাবে চিন্তা এবং উপলব্ধি করতে শেখায়।”
৪. বিল গেটস (Bill Gates):
বিল গেটস, মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা এবং একজন বিশিষ্ট কম্পিউটার বিজ্ঞানী, কম্পিউটার প্রযুক্তির অগ্রগতি নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।
“কম্পিউটারগুলি মানুষকে আরও শক্তিশালী এবং ক্ষমতাশালী করে তুলেছে, কারণ তারা তথ্যের প্রক্রিয়া, বিশ্লেষণ, এবং ফলাফল সরবরাহ করতে এক বিশাল ক্ষমতা প্রদান করে।”
৫. মেরি ল্যাম্বার্ট (Mary Lambert):
মেরি ল্যাম্বার্ট একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী এবং তথ্যপ্রযুক্তির পণ্ডিত। তিনি কম্পিউটার ও ডিজিটাল মাধ্যমের উন্নতির উপর গবেষণা করেছেন।
“কম্পিউটারের মাধ্যমে যে কোনো ধরনের কাজ সম্পাদন করা সম্ভব, শুধুমাত্র আপনার চিন্তা ও সৃজনশীলতার দৃষ্টিভঙ্গি থাকা প্রয়োজন।”
৬. ক্লাউস শ্নোল (Klaus Schenkel):
ক্লাউস শ্নোল কম্পিউটার নিরাপত্তা এবং ডিজিটাল বিপ্লবের উপর কাজ করেছেন। তিনি বলেন:
“কম্পিউটার প্রযুক্তি মানুষের জীবনে বিপ্লব ঘটাচ্ছে এবং সমাজের প্রতিটি খাতে এর প্রভাব পড়ছে, তবে এর নিরাপত্তা ও প্রাইভেসি নিয়ে সচেতনতা অপরিহার্য।”
৭. গ্রেস হপার (Grace Hopper):
গ্রেস হপার ছিলেন একজন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর কমান্ডার এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানী, যিনি প্রথম প্রোগ্রামিং ভাষা COBOL তৈরি করেছিলেন।
“কম্পিউটার এমন কিছু নয় যা ‘ভুল’ হতে পারে, বরং এটি নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবে—এটি আমাদের দায়িত্বে থাকা উচিত যে, কীভাবে আমরা তাদের নির্দেশনা দেবো।”
৮. লিনাস টরভাল্ডস (Linus Torvalds):
লিনাস টরভাল্ডস লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এবং ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেছেন।
“কম্পিউটার, বিশেষ করে ওপেন সোর্স প্রোগ্রামিং, আমাদেরকে শেখায় কীভাবে একে অপরের সঙ্গে কাজ করতে হয়, এটি একটি বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করে।”
এই সব বিজ্ঞানী এবং বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য থেকে বুঝা যায়, কম্পিউটার কেবল একটি যন্ত্র নয়, এটি মানুষের চিন্তাভাবনা, সৃজনশীলতা এবং কাজের ধরনকে নতুনভাবে গড়ার একটি শক্তিশালী উপকরণ। এটি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিল্প, শিক্ষা, এবং সামাজিক ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে এবং ভবিষ্যতে এর প্রভাব আরও ব্যাপক হবে।
কম্পিউটারের প্রধান অংশ কয়টি ও কি কি?
কম্পিউটারের প্রধান অংশগুলো হলো:
১. ইনপুট ইউনিট (Input Unit): কম্পিউটারে ডেটা প্রবেশ করানোর জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রাংশগুলোকে ইনপুট ইউনিট বলে। যেমন – কীবোর্ড, মাউস, স্ক্যানার ইত্যাদি।
২. সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট বা সিপিইউ (Central Processing Unit): এটি কম্পিউটারের মূল অংশ, যেখানে ডেটা প্রক্রিয়াকরণের কাজ সম্পন্ন হয়। একে কম্পিউটারের মস্তিষ্কও বলা হয়।
৩. মেমোরি ইউনিট (Memory Unit): এখানে ডেটা এবং নির্দেশাবলী সংরক্ষণ করা হয়। এটি দুই প্রকার – প্রধান মেমোরি (যেমন – RAM) এবং সহায়ক মেমোরি (যেমন – হার্ডডিস্ক)।
৪. আউটপুট ইউনিট (Output Unit): প্রক্রিয়াকৃত ডেটা প্রদর্শনের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রাংশগুলোকে আউটপুট ইউনিট বলে। যেমন – মনিটর, প্রিন্টার, স্পিকার ইত্যাদি।
কম্পিউটার এই চারটি প্রধান অংশের সমন্বয়ে কাজ করে। প্রথমে ইনপুট ইউনিটের মাধ্যমে ডেটা প্রবেশ করানো হয়, তারপর সিপিইউতে সেই ডেটা প্রক্রিয়া করা হয়, মেমোরি ইউনিটে ডেটা সংরক্ষণ করা হয় এবং সবশেষে আউটপুট ইউনিটের মাধ্যমে ফলাফল প্রদর্শন করা হয়।
কম্পিউটারের উৎপত্তি
কম্পিউটারের ধারণা বহু পুরনো হলেও আধুনিক কম্পিউটারের ভিত্তি তৈরি হয় ১৯৪০-এর দশকে। চার্লস ব্যাবেজকে (Charles Babbage) কম্পিউটারের জনক বলা হয়। ১৮৩৭ সালে তিনি “অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন” নামে একটি প্রাথমিক গণনা যন্ত্রের নকশা করেছিলেন, যা কম্পিউটারের আধুনিক ধারণার প্রথম মডেল হিসেবে বিবেচিত। তার এই উদ্ভাবনের ভিত্তিতেই আজকের কম্পিউটার প্রযুক্তির অগ্রগতি ঘটে।
চার্লস ব্যাবেজের কাজের পর কম্পিউটার প্রযুক্তি ধীরে ধীরে উন্নত হয়েছে। প্রথম আধুনিক কম্পিউটার “ENIAC” তৈরি হয় ১৯৪৬ সালে। এটি ছিল প্রথম ইলেকট্রনিক, প্রোগ্রামযোগ্য এবং পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল কম্পিউটার। এই কম্পিউটারটি ছিল অত্যন্ত বড় এবং ভারী, এবং এটি ব্যবহারের জন্য অনেক জায়গা প্রয়োজন হতো। পরবর্তীতে প্রযুক্তিগত উন্নতির সাথে সাথে কম্পিউটারগুলোর আকার ছোট হতে থাকে এবং পারফরম্যান্স আরও উন্নত হয়।
কম্পিউটারের প্রকারভেদ | কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি?
কম্পিউটারকে বিভিন্ন দিক থেকে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়। ব্যবহার, গঠন, কাজের ক্ষমতা, এবং প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে কম্পিউটারকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। নিচে কম্পিউটারের প্রধান প্রকারভেদগুলো উল্লেখ করা হলো:
১. আকার ও কার্যক্ষমতার ভিত্তিতে কম্পিউটারের প্রকারভেদ:
ক. সুপার কম্পিউটার (Supercomputer):
সুপার কম্পিউটার হলো সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটার যা অত্যন্ত দ্রুত ও জটিল কাজ সম্পন্ন করতে পারে। এটি সাধারণত বৈজ্ঞানিক গবেষণা, আবহাওয়া পূর্বাভাস, মহাকাশ গবেষণা, এবং নিউক্লিয়ার সিমুলেশনের মতো কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। সুপার কম্পিউটার অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং বড় সংস্থাগুলোর জন্য প্রয়োজনীয়।
খ. মেইনফ্রেম কম্পিউটার (Mainframe Computer):
মেইনফ্রেম কম্পিউটার বড় বড় সংস্থা এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়। এটি অনেক বড় আকারের তথ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং ডেটাবেস ম্যানেজমেন্টের কাজ করে থাকে। ব্যাংকিং, বিমা, এবং সরকারি কার্যক্রমে মেইনফ্রেম কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়।
গ. মিনি কম্পিউটার (Minicomputer):
মিনি কম্পিউটার আকারে ছোট এবং ক্ষমতায় মেইনফ্রেম কম্পিউটারের তুলনায় কম। এটি সাধারণত মাঝারি আকারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং গবেষণাগারে ব্যবহৃত হয়। মিনি কম্পিউটার বহুমুখী কাজ করতে সক্ষম এবং প্রায়শই নেটওয়ার্ক সংযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।
ঘ. মাইক্রো কম্পিউটার (Microcomputer):
মাইক্রো কম্পিউটার হলো সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য তৈরি কম্পিউটার, যা আমরা ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করি। এই ধরনের কম্পিউটারকে সাধারণত “পার্সোনাল কম্পিউটার (PC)” বলা হয়। ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, এবং ট্যাবলেট হলো মাইক্রো কম্পিউটারের উদাহরণ। এটি দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত এবং অনেক বেশি সাশ্রয়ী মূল্যের।
২. উপলব্ধির ভিত্তিতে কম্পিউটারের প্রকারভেদ:
ক. ডেস্কটপ কম্পিউটার (Desktop Computer):
ডেস্কটপ কম্পিউটার সাধারণত বাড়িতে বা অফিসে স্থিরভাবে ব্যবহার করা হয়। এতে বড় মনিটর, কীবোর্ড, মাউস, এবং অন্যান্য ডিভাইস থাকে। ডেস্কটপ কম্পিউটার সাধারণত বেশ শক্তিশালী এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ডেটা প্রসেসিংয়ের জন্য উপযুক্ত।
খ. ল্যাপটপ কম্পিউটার (Laptop Computer):
ল্যাপটপ কম্পিউটার হালকা, পোর্টেবল এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। এটি বহনযোগ্য এবং যেকোনো স্থানে সহজে ব্যবহার করা যায়। ডেস্কটপ কম্পিউটারের প্রায় সব সুবিধাই ল্যাপটপে পাওয়া যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে কম শক্তিশালী হতে পারে।
গ. ট্যাবলেট কম্পিউটার (Tablet Computer):
ট্যাবলেট কম্পিউটার আকারে ছোট, পোর্টেবল এবং স্পর্শ-ভিত্তিক। এটি সাধারণত বিনোদন, ই-বুক পড়া, এবং ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি ল্যাপটপের তুলনায় কম শক্তিশালী, তবে বহন করা সহজ।
৩. ব্যবহার অনুযায়ী কম্পিউটারের প্রকারভেদ:
ক. ওয়ার্কস্টেশন (Workstation):
ওয়ার্কস্টেশন হলো এমন ধরনের কম্পিউটার যা বিশেষ ধরনের কাজের জন্য তৈরি। এটি সাধারণত গ্রাফিক ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, এবং থ্রি-ডি রেন্ডারিংয়ের মতো জটিল কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। এই কম্পিউটারগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী এবং কর্মক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
খ. সার্ভার (Server):
সার্ভার হলো একটি বিশেষ ধরনের কম্পিউটার যা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্যান্য কম্পিউটারকে সেবা প্রদান করে। এটি ওয়েব হোস্টিং, ইমেল সেবা, এবং ডেটাবেস পরিচালনার মতো কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। সার্ভার সাধারণত নেটওয়ার্কের কেন্দ্রীয় কম্পিউটার হিসেবে কাজ করে।
গ. গেমিং কম্পিউটার (Gaming Computer):
গেমিং কম্পিউটার হলো একটি বিশেষ ধরনের মাইক্রো কম্পিউটার যা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ভিডিও গেম খেলার জন্য তৈরি। এতে উচ্চ গতির প্রসেসর, শক্তিশালী গ্রাফিক্স কার্ড, এবং উন্নত কুলিং সিস্টেম থাকে।
কম্পিউটারের ব্যবহার:
কম্পিউটার আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছে। এটি ব্যবহারের মাধ্যমে জটিল কাজ থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কার্যক্রম পর্যন্ত সবকিছু সহজ হয়েছে। নিচে কম্পিউটারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারের ক্ষেত্র উল্লেখ করা হলো:
১. ব্যবসা:
ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে কম্পিউটার তথ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, এবং বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়। একাউন্টিং, ম্যানেজমেন্ট, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট, এবং ই-মেইল যোগাযোগের জন্য কম্পিউটার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২. শিক্ষা:
কম্পিউটার শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি শক্তিশালী সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ই-বুক, অনলাইন কোর্স, এবং শিক্ষামূলক সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সহজেই জ্ঞান অর্জন করতে পারে।
৩. গবেষণা:
বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য কম্পিউটার অপরিহার্য। বিভিন্ন গবেষণা, সিমুলেশন, এবং ডেটা বিশ্লেষণের জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। এটি জটিল গাণিতিক সমীকরণ এবং মডেলিংয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৪. বিনোদন:
বিনোদনের জন্য কম্পিউটার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গান শোনা, সিনেমা দেখা, গেম খেলা, এবং ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের মাধ্যমে মানুষ বিনোদন পায়। কম্পিউটারের মাধ্যমে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ভিডিও স্ট্রিমিং সেবাও পাওয়া যায়।
৫. স্বাস্থ্যসেবা:
স্বাস্থ্যসেবায় কম্পিউটার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রোগীদের তথ্য সংরক্ষণ, ডায়াগনোসিস করা, এবং চিকিৎস।
আরও পড়ুন: কম্পিউটারের কাজ করার পদ্ধতি | কম্পিউটার এর প্রধান কাজ কি কি?
কম্পিউটার নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন
১. কম্পিউটার বিজ্ঞান কে আবিষ্কার করেন?
কম্পিউটার বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেন ব্রিটিশ গণিতবিদ এবং লজিশিয়ান অ্যাডা লাভলেস এবং অ্যালান টুরিং। অ্যাডা লাভলেসকে প্রথম প্রোগ্রামার বলা হয়, কারণ তিনি চার্লস ব্যাবেজের অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনের জন্য প্রথম অ্যালগরিদম লিখেছিলেন। অ্যালান টুরিং আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপনকারী একজন অন্যতম বিজ্ঞানী ছিলেন।
২. কম্পিউটারের কয়টি অংশ ও কি কি?
কম্পিউটারের প্রধান তিনটি অংশ রয়েছে:
১) CPU (Central Processing Unit): এটি তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে।
২) মেমোরি (RAM/Storage): ডেটা সংরক্ষণ ও দ্রুত অ্যাক্সেসের জন্য ব্যবহৃত হয়।
৩) ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইস: ইনপুট যেমন কীবোর্ড, মাউস এবং আউটপুট যেমন মনিটর, প্রিন্টার।
৩. কম্পিউটার এর পুরো নাম কি?
কম্পিউটারের কোনো পূর্ণাঙ্গ নাম নেই। “Computer” শব্দটি এসেছে “Compute” থেকে, যার অর্থ গণনা করা। এটি বিভিন্ন গাণিতিক ও লজিক্যাল কাজ সম্পাদনের একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস হিসেবে পরিচিত। যদিও “কম্পিউটার” শব্দটির কোনো সংক্ষিপ্ত রূপ নেই, এটি সাধারণত গণনার জন্য ব্যবহৃত হয়।
৪. কম্পিউটার শব্দের অর্থ কি?
“কম্পিউটার” শব্দটির অর্থ হলো “গণনাকারী যন্ত্র”। এটি ইংরেজি শব্দ “Compute” থেকে এসেছে, যার অর্থ গণনা করা। মূলত, এটি একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র যা দ্রুত এবং সঠিকভাবে গণনা ও তথ্য প্রক্রিয়াজাত করতে সক্ষম। বিভিন্ন লজিক্যাল এবং গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।
৫. কম্পিউটারের জনক কে?
কম্পিউটারের জনক বলা হয় চার্লস ব্যাবেজকে (Charles Babbage)। তিনি ১৮৩৭ সালে “অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন” নামে একটি প্রাথমিক গণনা যন্ত্রের নকশা করেন, যা আধুনিক কম্পিউটারের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। তার এই উদ্ভাবনই পরবর্তীকালে কম্পিউটারের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৬. কম্পিউটার মাসে কত টাকা বিল আসে?
কম্পিউটারের বিদ্যুৎ বিল নির্ভর করে কম্পিউটারের ব্যবহারের সময় এবং এর পাওয়ার কনজাম্পশনের উপর। একটি সাধারণ ডেস্কটপ কম্পিউটার সাধারণত ২০০-৩০০ ওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, যা মাসিক প্রায় ৫০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত বিল হতে পারে। তবে ল্যাপটপ কম বিদ্যুৎ খরচ করে।
৭. বাংলাদেশের প্রথম কম্পিউটারের নাম কি?
বাংলাদেশের প্রথম কম্পিউটারের নাম ছিল IBM 1620। এটি ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছিল। এই কম্পিউটারটি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কম্পিউটিংয়ের ব্যবহার শুরু করে এবং তা গবেষণা, শিক্ষা, এবং বিভিন্ন গাণিতিক কাজের জন্য ব্যবহৃত হতো।
৮. প্রথম কম্পিউটার নির্মাতা কে?
প্রথম ইলেকট্রনিক কম্পিউটার নির্মাতারা ছিলেন জন প্রেসপার একার্ট (John Presper Eckert) এবং জন উইলিয়াম মাউচলি (John William Mauchly)। তারা ১৯৪৫ সালে প্রথম ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটার ENIAC (Electronic Numerical Integrator and Computer) তৈরি করেন, যা গণনা ও তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
৯. কম্পিউটার কত ওয়াট?
কম্পিউটারের পাওয়ার কনজাম্পশন বিভিন্ন মডেলের উপর নির্ভর করে। একটি সাধারণ ডেস্কটপ কম্পিউটার ২০০-৩০০ ওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, তবে হাই-পারফরম্যান্স গেমিং বা ওয়ার্কস্টেশন কম্পিউটার প্রায় ৪০০-৬০০ ওয়াট পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারে। ল্যাপটপ সাধারণত ৫০-১০০ ওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, যা কম বিদ্যুৎ খরচ করে।
১০. কত সালে কম্পিউটার আবিষ্কার হয়?
প্রথম ইলেকট্রনিক কম্পিউটার ENIAC আবিষ্কার হয় ১৯৪৫ সালে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে জন প্রেসপার একার্ট এবং জন উইলিয়াম মাউচলি দ্বারা তৈরি হয়েছিল। তবে চার্লস ব্যাবেজের “অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন” ধারণাটি ১৮৩৭ সালে তৈরি হয়েছিল, যা আধুনিক কম্পিউটারের প্রাথমিক ভিত্তি ছিল।
কম্পিউটার বিষয়ক ১০টি এমসিকিউ
নিচে কম্পিউটার সম্পর্কিত ১০টি এমসিকিউ (MCQ) দেওয়া হলো, প্রতিটির সাথে সঠিক উত্তরও সংযুক্ত করা হয়েছে।
- কম্পিউটারের জনক কাকে বলা হয়?
a) চার্লস ব্যাবেজ
b) অ্যালান টিউরিং
c) বিল গেটস
d) স্টিভ জবস
উত্তর: a) চার্লস ব্যাবেজ - CPU-এর প্রধান কাজ কী?
a) ইনপুট গ্রহণ করা
b) ডেটা সংরক্ষণ করা
c) তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করা
d) আউটপুট তৈরি করা
উত্তর: c) তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করা - RAM-এর পূর্ণরূপ কী?
a) Read Access Memory
b) Random Access Memory
c) Read and Manage
d) Remote Access Memory
উত্তর: b) Random Access Memory - কোনটি একটি অপারেটিং সিস্টেম?
a) Microsoft Word
b) Windows 10
c) Google Chrome
d) Adobe Photoshop
উত্তর: b) Windows 10 - বাইনারি সংখ্যায় কয়টি সংখ্যা ব্যবহৃত হয়?
a) 2
b) 8
c) 10
d) 16
উত্তর: a) 2 - কোনটি প্রথম ইলেকট্রনিক কম্পিউটার?
a) ENIAC
b) UNIVAC
c) IBM 360
d) Apple I
উত্তর: a) ENIAC - কোনটি কম্পিউটারের ইনপুট ডিভাইস?
a) মনিটর
b) মাউস
c) প্রিন্টার
d) স্পিকার
উত্তর: b) মাউস - কোন প্রোগ্রামিং ভাষাটি ওয়েব ডেভেলপমেন্টে বেশি ব্যবহৃত হয়?
a) Python
b) Java
c) JavaScript
d) C++
উত্তর: c) JavaScript - হার্ডডিস্কের ধারণক্ষমতা কীভাবে পরিমাপ করা হয়?
a) MHz
b) GHz
c) GB
d) DPI
উত্তর: c) GB - কম্পিউটারের মস্তিষ্ক বলা হয় কাকে?
a) RAM
b) CPU
c) Hard Disk
d) GPU
উত্তর: b) CPU