ইন্টারনেট হলো একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক যা তথ্য, যোগাযোগ এবং পরিষেবা প্রদান করে, কম্পিউটার ও ডিভাইস সংযুক্ত করে। আজকে আমরা ইন্টারনেট কি? Internet এর পূর্ণরূপ কী? ইন্টারনেটের মালিক কে? ইন্টারনেট কে আবিস্কার করেন? উৎপত্তি এবং বিকাশ, ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে? ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করব।

ইন্টারনেট কি? ইন্টারনেট কাকে বলে?
ইন্টারনেট কি: ইন্টারনেট হলো একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক যা কম্পিউটার এবং অন্যান্য ডিভাইসগুলোকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত করে। এটি মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন ধরনের তথ্য, পরিষেবা এবং যোগাযোগের সুবিধা পেতে পারেন। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনি ইমেইল পাঠাতে, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে, ওয়েবসাইট ব্রাউজ করতে এবং অনলাইন শপিং করতে পারেন। এটি মূলত কম্পিউটার নেটওয়ার্কের একটি বৃহৎ এবং জটিল ব্যবস্থা যা বিভিন্ন প্রোটোকল এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
Internet এর পূর্ণরূপ কী?
“Internet” শব্দের কোনো পূর্ণরূপ নেই। এটি একটি সংক্ষেপিত নাম যা “interconnected network” বা “inter-network” থেকে এসেছে। এটি কম্পিউটার এবং অন্যান্য ডিভাইসগুলির একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ককে বোঝায়।
ইন্টারনেট কে আবিস্কার করেন?
ইন্টারনেটের ধারণা প্রথমে ১৯৬০-এর দশকে ইউএস ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সি (DARPA) দ্বারা তৈরি ARPANET প্রকল্পের মাধ্যমে বিকশিত হয়। এর পরবর্তী উন্নয়ন এবং প্যান-নেটওয়ার্ক প্রোটোকল তৈরি করার মাধ্যমে ইন্টারনেট বর্তমান রূপে আসে। এর কোনো একক আবিষ্কারক নেই, তবে টিম বার্নার্স-লি, যিনি ওয়েবের ধারণা এবং প্রথম ওয়েব ব্রাউজার তৈরি করেছিলেন, তিনি ইন্টারনেটের বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
ইন্টারনেটের বৈশিষ্ট্য সমূহ
ইন্টারনেটের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ:
- বিশ্বব্যাপী সংযোগ: এটি একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক যা বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস এবং নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করে।
- ডাটা প্যাকেটিং: তথ্য ছোট ছোট প্যাকেটে ভাগ করা হয় এবং প্রতিটি প্যাকেট নির্দিষ্ট ঠিকানায় পাঠানো হয়।
- ডায়নামিক কনফিগারেশন: নেটওয়ার্কের আর্কিটেকচার এবং সংযোগগুলি পরিবর্তনশীল এবং পরিবেশ অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।
- বহুবিধ প্রোটোকল: বিভিন্ন প্রোটোকল (যেমন TCP/IP, HTTP, FTP) তথ্য প্রেরণ এবং প্রাপ্তি নিয়ন্ত্রণ করে।
- ডোমেন নেম সিস্টেম (DNS): ওয়েবসাইটের নামগুলোকে আইপি ঠিকানায় রূপান্তরিত করে সঠিক সার্ভারে পৌঁছানো নিশ্চিত করে।
- সার্ভার-ক্লায়েন্ট আর্কিটেকচার: ক্লায়েন্ট ডিভাইসগুলি সার্ভার থেকে তথ্য প্রাপ্তি এবং অনুরোধ করে।
- স্কেলেবিলিটি: নতুন ডিভাইস এবং নেটওয়ার্ক সংযোগের জন্য সহজভাবে স্কেল করা যায়।
- বহুবিধ অ্যাপ্লিকেশন: ইন্টারনেট বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন এবং পরিষেবা সরবরাহ করে, যেমন ইমেইল, সোশ্যাল মিডিয়া, স্ট্রিমিং, এবং অনলাইন গেমিং।
- উন্মুক্ত মান: ইন্টারনেটের প্রযুক্তি ও প্রোটোকলগুলি সাধারণত উন্মুক্ত মান এবং স্ট্যান্ডার্ডের ওপর ভিত্তি করে কাজ করে।
- স্বায়ত্তশাসন: এটি কোনও একক সংস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, বরং একাধিক সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত হয়।
এই বৈশিষ্ট্যগুলি ইন্টারনেটকে একটি শক্তিশালী এবং বহুমুখী তথ্য ও যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলে।
ইন্টারনেটের (Internet) উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
ইন্টারনেটের উৎপত্তি এবং ক্রমবিকাশের প্রক্রিয়া নিম্নরূপ:
- ARPANET (1960s-1970s): ইন্টারনেটের মূল ধারণা প্রথম তৈরি হয় ১৯৬০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সি (DARPA) দ্বারা। তাদের প্রকল্প ARPANET (অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সি নেটওয়ার্ক) কম্পিউটারগুলির মধ্যে তথ্য বিনিময়ের জন্য একটি প্রাথমিক নেটওয়ার্ক ছিল।
- TCP/IP প্রোটোকল (1970s-1980s): ১৯৭০-এর দশকে ভিন্টন সার্ফ এবং রবার্ট কাহ্নের দ্বারা TCP/IP (ট্রান্সমিশন কন্ট্রোল প্রোটোকল/ইন্টারনেট প্রোটোকল) প্রোটোকল উন্নীত হয়, যা বিভিন্ন নেটওয়ার্ককে একত্রিত করার এবং তাদের মধ্যে যোগাযোগের প্রক্রিয়া স্থাপন করতে সাহায্য করে। ১৯৮৩ সালে ARPANET TCP/IP প্রোটোকল ব্যবহার শুরু করে, যা ইন্টারনেটের ভিত্তি স্থাপন করে।
- প্রথম ওয়েব ব্রাউজার (1990s): ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে টিম বার্নার্স-লি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (WWW) এর ধারণা এবং প্রথম ওয়েব ব্রাউজার তৈরি করেন। এটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য তথ্য সন্ধান এবং অ্যাক্সেস সহজতর করে।
- প্রথম ওয়েব সাইট (1991): ১৯৯১ সালে প্রথম ওয়েবসাইট, CERN-এর হোম পেজ, ইন্টারনেটে প্রকাশিত হয়।
- বাণিজ্যিকীকরণ (1990s): ১৯৯৫ সালের পর ইন্টারনেট বাণিজ্যিকভাবে উপলব্ধ হতে শুরু করে, এবং এটি দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
- সামাজিক মিডিয়া ও মোবাইল ইন্টারনেট (2000s-বর্তমান): ২০০০-এর দশকে সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, ব্লগ, এবং মোবাইল ইন্টারনেটের উদ্ভব ঘটে, যা ইন্টারনেটের ব্যবহার এবং বিস্তারকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে।
আজকের দিনে ইন্টারনেট একটি বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের এবং তথ্যের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে?
ইন্টারনেট কাজ করে বিভিন্ন কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান এবং সংযোগের মাধ্যমে। এটি মূলত নিম্নলিখিতভাবে কাজ করে:
- ডেটা প্যাকেট: তথ্য ইন্টারনেটে প্যাকেট আকারে পাঠানো হয়। প্রতিটি প্যাকেট তথ্যের একটি ছোট অংশ ধারণ করে এবং নিজস্ব ঠিকানা থাকে।
- আইপি ঠিকানা: প্রতিটি ডিভাইস একটি ইউনিক আইপি (ইন্টারনেট প্রোটোকল) ঠিকানা পায় যা অনন্যভাবে চিহ্নিত করে। এটি সাহায্য করে তথ্য সঠিক ডিভাইসে পৌঁছানোর জন্য।
- DNS (ডোমেন নেম সিস্টেম): ব্যবহারকারীরা সাধারণত ওয়েবসাইট এর নাম (যেমন www.example.com) টাইপ করেন। DNS সেই নামগুলোকে আইপি ঠিকানায় রূপান্তরিত করে, যাতে কম্পিউটার সঠিক সার্ভার খুঁজে পেতে পারে।
- রাউটিং: তথ্য প্যাকেট বিভিন্ন রাউটার এবং সার্ভারের মাধ্যমে গন্তব্যে পৌঁছায়। রাউটারগুলি প্যাকেটগুলির সঠিক পথে পরিচালনা করে যাতে তারা দ্রুত এবং কার্যকরভাবে পৌঁছায়।
- TCP/IP প্রোটোকল: TCP (ট্রান্সমিশন কন্ট্রোল প্রোটোকল) নিশ্চিত করে যে সমস্ত প্যাকেট সঠিকভাবে এবং যথাসময়ে পৌঁছেছে। IP (ইন্টারনেট প্রোটোকল) প্যাকেটগুলির গন্তব্য ঠিকানায় পৌঁছানোর জন্য রুট নির্ধারণ করে।
- ওয়েব সার্ভার এবং ক্লায়েন্ট: যখন আপনি একটি ওয়েবসাইট পরিদর্শন করেন, আপনার ব্রাউজার (ক্লায়েন্ট) সার্ভারে একটি অনুরোধ পাঠায়। সার্ভার সেই অনুরোধ প্রক্রিয়া করে এবং ব্রাউজারে প্রদর্শনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠায়।
এই উপাদানগুলি একত্রে কাজ করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য প্রেরণ এবং গ্রহণকে সক্ষম করে।
ইন্টারনেট কি বিপজ্জনক?
ইন্টারনেট কি বিপজ্জনক: ইন্টারনেট নিজে বিপজ্জনক নয়, তবে এর ব্যবহার কিছু ঝুঁকি এবং সমস্যা তৈরি করতে পারে। কিছু সম্ভাব্য বিপদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:
- সাইবার অপরাধ: হ্যাকিং, ফিশিং, এবং অন্যান্য সাইবার অপরাধের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হতে পারে।
- ম্যালওয়্যার: ভাইরাস, ট্রোজান, এবং অন্যান্য ম্যালওয়্যার আপনার ডিভাইসে ক্ষতি করতে পারে।
- গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা: আপনার ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে শেয়ার করলে তা ভুল হাতে পড়তে পারে এবং গোপনীয়তা ক্ষুণ্ন হতে পারে।
- ভুয়া তথ্য: ইন্টারনেটে মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হতে পারে।
- সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং: প্রতারণামূলক কল বা মেসেজের মাধ্যমে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হতে পারে।
এই ঝুঁকিগুলির প্রতিকার হিসেবে, নিরাপত্তা সফটওয়্যার ব্যবহার, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি, সতর্কতার সাথে লিঙ্কে ক্লিক করা এবং ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা গুরুত্বপূর্ণ।
ইন্টারনেটের সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ
ইন্টারনেটের সুবিধা ও অসুবিধা নিম্নরূপ:
সুবিধা:
- তথ্য প্রবাহ: যে কোনো সময়ে বিশাল পরিমাণ তথ্য এবং জ্ঞান পাওয়া যায়।
- যোগাযোগ: ইমেইল, মেসেজিং, ভিডিও কলের মাধ্যমে সহজে যোগাযোগ করা যায়।
- শিক্ষা: অনলাইন কোর্স, টিউটোরিয়াল, এবং শিক্ষণীয় সামগ্রী সহজলভ্য।
- বাণিজ্যিক সুযোগ: অনলাইন শপিং, ব্যবসায়িক সুযোগ এবং ডিজিটাল মার্কেটিং।
- এন্টারটেইনমেন্ট: ভিডিও স্ট্রিমিং, গেমিং, এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বিনোদন।
- অ্যাক্সেসিবিলিটি: দুর্বল বা দূরবর্তী এলাকায় তথ্য ও পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।
অসুবিধা:
- সাইবার অপরাধ: হ্যাকিং, ডেটা চুরি, এবং অন্যান্য সাইবার অপরাধের ঝুঁকি।
- গোপনীয়তা: ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা ক্ষুণ্ন হতে পারে।
- ভুয়া তথ্য: মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা।
- ম্যালওয়্যার: ভাইরাস ও অন্যান্য ক্ষতিকর সফটওয়্যার দ্বারা সিস্টেমের ক্ষতি।
- আসক্তি: অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং: প্রতারণার মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা।
এই সুবিধা ও অসুবিধাগুলি মোকাবেলা করতে সচেতনতা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ, এবং সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ইন্টারনেটকে নিরাপদ ও কার্যকরভাবে ব্যবহার করা সম্ভব।
ইন্টারনেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন
ইন্টারনেটের প্রতিষ্ঠাতা কে?
ইন্টারনেটের প্রতিষ্ঠাতা বলতে নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা যায় না, কারণ এটি বহু বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, এবং গবেষকের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। তবে ইন্টারনেট বিকাশের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির অবদান রয়েছে:
১. ভিন্ট সার্ফ (Vint Cerf) এবং বব কান (Bob Kahn):
- এদেরকে “ইন্টারনেটের জনক” (Fathers of the Internet) বলা হয়।
- তাঁরা ১৯৭০-এর দশকে TCP/IP (Transmission Control Protocol/Internet Protocol) প্রোটোকল তৈরি করেন, যা ইন্টারনেটের মূল ভিত্তি।
২. লরেন্স রবার্টস (Lawrence Roberts):
- ARPANET (Advanced Research Projects Agency Network) উন্নয়নের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যা ইন্টারনেটের প্রথম সংস্করণ।
৩. টিম বার্নার্স-লি (Tim Berners-Lee):
- তিনি ইন্টারনেটের ওপর ভিত্তি করে “ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব” (WWW) তৈরি করেন, যা ইন্টারনেটকে বিশ্বব্যাপী ব্যবহারযোগ্য করে তোলে।
- ১৯৮৯ সালে তিনি প্রথম ব্রাউজার এবং HTML তৈরি করেন।
ইন্টারনেটের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ সময়:
- ১৯৬৯: ARPANET তৈরি হয়, যা ইন্টারনেটের প্রথম ধাপ।
- ১৯৭০-এর দশক: TCP/IP প্রোটোকল উদ্ভাবিত হয়।
- ১৯৮০-৯০-এর দশক: ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের মাধ্যমে ইন্টারনেট জনসাধারণের কাছে পৌঁছে।
ইন্টারনেটের প্রতিষ্ঠা বহু বছরের গবেষণা ও উন্নয়নের ফল এবং এটি বিভিন্ন ব্যক্তির সম্মিলিত অবদানে সম্ভব হয়েছে। তবে, ভিন্ট সার্ফ এবং বব কানকে ইন্টারনেটের মূল স্থপতি হিসেবে ধরা হয়।
ইন্টারনেট আবিষ্কার করেন কে?
ইন্টারনেট কোনো একজন ব্যক্তি আবিষ্কার করেননি। এটি বহু বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং গবেষকের যুগান্তকারী কাজের ফল। তবে যদি “ইন্টারনেট আবিষ্কার” বলতে এর ভিত্তি স্থাপনের কথা বোঝানো হয়, তাহলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নাম এবং ঘটনা উল্লেখযোগ্য:
ইন্টারনেটের আবিষ্কারে অবদানকারী ব্যক্তিরা:
- লরেন্স রবার্টস (Lawrence Roberts):
- ১৯৬০-এর দশকে মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থা (DARPA)-র উদ্যোগে ARPANET তৈরি করেন, যা ইন্টারনেটের পূর্বসূরী।
- তিনি কম্পিউটার নেটওয়ার্কিংয়ের ধারণা বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেন।
- ভিন্ট সার্ফ (Vint Cerf) এবং বব কান (Bob Kahn):
- ১৯৭০-এর দশকে TCP/IP প্রোটোকল তৈরি করেন, যা ইন্টারনেটের যোগাযোগ ব্যবস্থার ভিত্তি।
- এদেরকে “ইন্টারনেটের জনক” বলা হয়।
- পল ব্যারান (Paul Baran):
- প্যাকেট সুইচিং প্রযুক্তির ধারণা দেন, যা ইন্টারনেট ডেটা ট্রান্সমিশনের মূল ভিত্তি।
- টিম বার্নার্স-লি (Tim Berners-Lee):
- ১৯৮৯ সালে World Wide Web (WWW) তৈরি করেন, যা ইন্টারনেটকে সহজলভ্য করে তোলে।
ইন্টারনেটের মূল উন্নয়ন পর্যায়:
- ১৯৬৯: ARPANET-এর প্রথম সফল যোগাযোগ স্থাপন।
- ১৯৭৩: TCP/IP প্রোটোকলের বিকাশ।
- ১৯৮৩: TCP/IP প্রোটোকল আনুষ্ঠানিকভাবে ইন্টারনেটের জন্য মান হিসাবে গৃহীত হয়।
- ১৯৮৯: টিম বার্নার্স-লি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব তৈরি করেন।
ইন্টারনেটের আবিষ্কার একটি যৌথ প্রচেষ্টা ছিল। তবে, ভিন্ট সার্ফ এবং বব কান TCP/IP তৈরি করার জন্য ইন্টারনেটের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বেশি পরিচিত। টিম বার্নার্স-লি ইন্টারনেটকে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে আসার মাধ্যমে এর ব্যবহারিক জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছেন।
বিশ্বের প্রথম ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের নাম কি?
বিশ্বের প্রথম ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের নাম ছিল ARPANET (Advanced Research Projects Agency Network)। এটি ১৯৬৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের DARPA (Defense Advanced Research Projects Agency)-র তত্ত্বাবধানে তৈরি হয়েছিল।
ARPANET-এর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- লক্ষ্য:
- গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্রুত ও নিরাপদ যোগাযোগ স্থাপন করা।
- একটি বিকেন্দ্রীকৃত নেটওয়ার্ক তৈরি করা, যা যুদ্ধ বা দুর্যোগের সময়েও কার্যকর থাকবে।
- প্রথম যোগাযোগ:
- ২৯ অক্টোবর ১৯৬৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস অ্যাঞ্জেলেস (UCLA) এবং স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (SRI) মধ্যে প্রথমবারের মতো বার্তা প্রেরণ করা হয়।
- বার্তাটি ছিল “LOG,” যদিও পুরো বার্তাটি “LOGIN” পাঠানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, তবে সিস্টেম ক্র্যাশ করায় শুধু “LOG” পৌঁছায়।
- প্রযুক্তিগত ভিত্তি:
- ARPANET প্যাকেট সুইচিং প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিল, যা আজকের ইন্টারনেটের মূল ভিত্তি।
- অবদান:
- ARPANET পরবর্তীতে TCP/IP প্রোটোকলের মাধ্যমে আধুনিক ইন্টারনেটের ভিত্তি স্থাপন করে।
- ১৯৯০ সালে ARPANET আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়, তবে এর প্রযুক্তি এবং ধারণা ইন্টারনেটের মূল কাঠামোতে রূপান্তরিত হয়।
ARPANET ছিল আধুনিক ইন্টারনেটের পথপ্রদর্শক এবং এটি কম্পিউটার নেটওয়ার্কিংয়ের ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব সৃষ্টি করেছিল।
বিশ্বের প্রথম ইন্টারনেট ওয়ার্ম এর নাম কি?
বিশ্বের প্রথম ইন্টারনেট ওয়ার্মের নাম ছিল “মরিস ওয়ার্ম” (Morris Worm)। এটি ১৯৮৮ সালের ২ নভেম্বর মুক্তি পায় এবং এটি ইতিহাসে প্রথম উল্লেখযোগ্য কম্পিউটার ওয়ার্ম যা ইন্টারনেট জগতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল।
মরিস ওয়ার্ম সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- নাম:
- এর নামকরণ হয়েছে এর নির্মাতা রবার্ট টি. মরিস (Robert T. Morris)-এর নামে।
- উদ্দেশ্য:
- মূলত এটি একটি পরীক্ষা হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল, ইন্টারনেটের আকার এবং দুর্বলতাগুলো বোঝার জন্য। তবে এটি ভুলবশত বড় আকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করে।
- প্রভাব:
- প্রায় ৬,০০০ কম্পিউটারকে সংক্রামিত করে, যা তখনকার ইন্টারনেটের ১০%-এর বেশি।
- এটি সিস্টেমের কর্মক্ষমতা হ্রাস করে এবং অনেক কম্পিউটার অকার্যকর হয়ে পড়ে।
- কার্যপদ্ধতি:
- মরিস ওয়ার্ম UNIX-ভিত্তিক সিস্টেমের দুর্বলতাগুলো কাজে লাগিয়ে ছড়িয়ে পড়ত।
- এটি ইমেইল, ফিঙ্গার ডেমন এবং রিমোট শেল প্রোটোকলের ত্রুটি ব্যবহার করে কম্পিউটার সংক্রমিত করত।
- ফলাফল:
- এটি প্রথমবারের মতো সাইবার নিরাপত্তার গুরুত্ব বিশ্বকে বোঝায়।
- রবার্ট টি. মরিসকে পরে আইনি সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় এবং তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
- মরিস ওয়ার্মের প্রভাব:
- এই ঘটনার পর কম্পিউটার ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম (CERT) প্রতিষ্ঠিত হয়, যা সাইবার নিরাপত্তা হুমকির মোকাবিলার জন্য কাজ করে।
উপসংহার:
মরিস ওয়ার্ম ছিল প্রথম ইন্টারনেট-ভিত্তিক বড় মাপের সাইবার আক্রমণ এবং এটি সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ এবং সচেতনতার জন্ম দেয়।