মাটি কাকে বলে? মাটি কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণ দাও

মাটি হলো ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের একটি স্তর, যা খনিজ কণা, জৈব পদার্থ, পানি ও বায়ুর মিশ্রণে তৈরি। গাছপালা জন্মানোর মূল মাধ্যম হলো এটি এবং পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রাণিজগতের প্রধান উপাদানগুলির মধ্যে একটি হলো মাটি, যা খাদ্য উৎপাদন, পানি শোষণ ও মাটির নিচের প্রাণীকুলের আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে। আজকে আমরা মাটি কাকে বলে? মাটি কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণ দাও ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করব।

মাটি কাকে বলে

মাটি কাকে বলে? মাটি কি?

মাটি কাকে বলে: মাটি বা মৃত্তিকা হলো পৃথিবীর উপরিভাগের নরম আবরণ যা পাথর গুঁড়ো হয়ে সৃষ্ট খনিজ পদার্থ এবং জৈব যৌগ মিশ্রিত হয়ে গঠিত হয়। এই মিশ্রণে বায়ু, পানি এবং বিভিন্ন জীবন্ত উপাদানও থাকে। মাটি জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি উদ্ভিদকে খাদ্য ও আশ্রয় সরবরাহ করে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক।

মাটির সংজ্ঞা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভিন্ন হতে পারে। সাধারণভাবে, মাটি হলো একটি প্রাকৃতিক বস্তু যা ভূপৃষ্ঠের সবচেয়ে উপরের স্তর গঠন করে এবং উদ্ভিদ জন্মানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করে। মৃত্তিকা বিজ্ঞানের ভাষায়, মাটি হলো বিভিন্ন ভৌত, রাসায়নিক এবং জৈবিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত একটি জটিল ব্যবস্থা, যা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে পারে।

মাটির উৎপত্তি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। প্রথমে, পাথর আবহাওয়া এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে ভেঙে ছোট ছোট কণায় পরিণত হয়। এরপর, এই কণাগুলোর সাথে জৈব পদার্থ (যেমন – পচা পাতা, জীবজন্তুর দেহাবশেষ) মিশে মাটি তৈরি হয়। মাটির উর্বরতা নির্ভর করে এর গঠন, উপাদান এবং জৈব পদার্থের উপস্থিতির উপর।

মাটি বিভিন্ন প্রকার হতে পারে, যেমন – বেলে মাটি, এঁটেল মাটি, দোআঁশ মাটি ইত্যাদি। প্রতিটি প্রকার মাটির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা এর ব্যবহার এবং উদ্ভিদের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে। মাটি আমাদের খাদ্য উৎপাদন, পরিবেশের সুরক্ষা এবং জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আবার বলা যায়, পৃথিবীর বিশাল প্রাকৃতিক শোধনাগার হচ্ছে মাটি। সাধারণত আদর্শ মাটিতে ৫% ভাগ জৈব পদার্থ থাকে। আমাদের জন্য মাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মাটি হলো পৃথিবীর উপরিভাগের একটি স্তর, যা শিলা, খনিজ, পচনশীল উপাদান, জল, বায়ু এবং জীবজন্তুর অবশেষে তৈরি। এটি কৃষি, নির্মাণ, এবং পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাটি জীববৈচিত্র্যের জন্য আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে এবং উদ্ভিদজাত খাবারের উৎপাদনেও অপরিহার্য।

মাটির উপাদান:

  1. খনিজ: মাটির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের খনিজ যেমন সিলিকা, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি থাকে।
  2. জীবাশ্ম: জীবিত ও মৃত উদ্ভিদ এবং প্রাণীর অবশিষ্টাংশ মাটির উপাদান হিসেবে থাকে।
  3. পানি: মাটির মধ্যে পানি থাকে যা উদ্ভিদের শেকড় দ্বারা শোষিত হয়।
  4. বায়ু: মাটির ভিতরে বায়ু থাকে, যা উদ্ভিদ ও অন্যান্য প্রাণীর শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয়।

মাটি কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণ দাও

প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক গঠনের উপর ভিত্তি করে মাটি ৫ প্রকার। এগুলো হলো –

  • পাহাড়ি মাটি
  • ল্যাটোসেলিক মাটি
  • পলল মাটি
  • জলাভূমি মাটি
  • কোষ মাটি

পাহাড়ি মাটি: প্রধানত পাহাড়ি অঞ্চলে পাওয়া যায়। এটি সাধারণত লাল বা হলুদাভ হয় এবং এতে জৈব পদার্থ কম থাকায় উর্বরতা কম। তবে কিছু ক্ষেত্রে, ফসল উৎপাদনের জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।

ল্যাটেরাইটিক মাটি: উষ্ণ ও আর্দ্র অঞ্চলে পাওয়া যায়। এতে লৌহ ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড বেশি থাকে, ফলে মাটি লালচে হয়। এই মাটি পানি ধারণে দুর্বল, তবে চা, কফি, রাবার চাষে উপযুক্ত।

পলল মাটি কাকে বলে: নদী ও স্রোতের বয়ে আনা পলল থেকে গঠিত হয়। এটি উর্বর এবং ধান, গম, চা, আখের মতো ফসলের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।

জলাভূমি মাটি: প্রধানত জলাভূমি ও নিম্নাঞ্চলে পাওয়া যায়। এতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকে এবং সাধারণত এই মাটি জলাশয়ের পাশের শস্য উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়।

কোষ মাটি: এতে ছোট ছোট বালুকণা থাকে এবং এটি পানি ধারণে সক্ষম। এ ধরনের মাটি সবজি ও ফুলের চাষে ব্যবহৃত হয়, কারণ এটি শিকড়ের বৃদ্ধিতে সহায়ক।

বুনটের উপর ভিত্তি করে মাটি আবার ৩ প্রকার। যথা:

  • বেলে মাটি
  • দো-আঁশ মাটি
  • এঁটেল মাটি

বেলে মাটি: এ মাটিতে বালির পরিমাণ বেশি থাকে এবং এটি দ্রুত পানি শোষণ করে, তবে পানি ধরে রাখতে পারে না। ৭০% বল তার বেশি বালি থাকে। মরুভূমি, চরাঞ্চল ও সমুদ্র উপকূলে এ মাটি দেখা যায়। এ-ই মাটিতে জৈব পদার্থ নেই। ফলে এটি সাধারণত শুষ্ক ও শস্য উৎপাদনে কম উর্বর। বেলে মাটি মূলত তরমুজ, বাদাম ও গাজরের মতো ফসলের জন্য উপযুক্ত।

দো-আঁশ মাটি: যে মাটিতে বালি,পলি ও কর্দমকণা প্রায় সমান অনুপাতে থাকে, তাকে দো-আঁশ মাটি বলল। অর্থাৎ, বালি, পলি ও এঁটেল মাটির মিশ্রণে গঠিত, যা পানি ধারণ এবং নিষ্কাশনের জন্য উপযুক্ত।এ মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি, তাই চাষের জন্য সর্বাপেক্ষা উপযোগী। বাংলাদেশের অধিকাংশ মাটি দো-আঁশ মাটি। এটি উর্বর হওয়ায় প্রায় সব ধরনের শস্য যেমন ধান, গম, সবজি ও ফল উৎপাদনে ব্যবহার করা যায়।

এঁটেল মাটি: যে মাটিতে ৪০-৫০% কর্দমকণা থাকে তাকে এঁটেল মাটি বলে। এতে মাটি কণার আকার ছোট এবং এটি আঠালো ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতা বেশি। এ মাটিকে ভারী মাটিও বলা হয়। ধীরে শুকানো ও পানি নিষ্কাশন কঠিন হওয়ায় ধান, পাট, ও আখের মতো জলপ্রিয় ফসলের জন্য এ মাটি ভালো।

মাটিপানি ধারণক্ষমতা পানি শোষণক্ষমতা
বেলে মাটি সর্বনিম্ন সর্বোচ্চ
দো-আঁশ মাটিবেশিবেশি
এঁটেল মাটিসর্বোচ্চসর্বনিম্ন

আরও পড়ুন: পরিবেশের উপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির তিনটি ক্ষতিকর প্রভাব লেখ

বেলে মাটি ও এঁটেল মাটির পার্থক্য

বেলে মাটি এবং এঁটেল মাটি দুটি ভিন্ন ধরনের মাটি, যার বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহারেও পার্থক্য রয়েছে।

বেলে মাটি:

  1. বৈশিষ্ট্য:
    • বেলে মাটির মূল উপাদান হল বালি, যা এর মধ্যে প্রায় ৫০% থাকে।
    • এই মাটি অতিরিক্ত শোষণ ক্ষমতা রাখে না, ফলে দ্রুত পানি প্রবাহিত হয়।
    • এটি সাধারণত ফাঁপা এবং মসৃণ, তাই মাটির ঘনত্ব কম।
    • এর গঠন শিথিল, ফলে এর অণুপ্রবেশ ও শিকড় বৃদ্ধির জন্য সুবিধাজনক।
  2. ব্যবহার:
    • বেলে মাটি কৃষির জন্য উপযুক্ত, বিশেষত উদ্ভিদ যা অতিরিক্ত পানি সহ্য করতে পারে।
    • নির্মাণ কাজের জন্যও এটি ব্যবহৃত হয়, কারণ এটি সহজে খনন করা যায়।
  3. অসুবিধা:
    • বেলে মাটি দ্রুত পানি হারিয়ে ফেলে, তাই এটি চাষের জন্য পানি ধারণক্ষমতা কম।

এঁটেল মাটি:

  1. বৈশিষ্ট্য:
    • এঁটেল মাটির মধ্যে কাদা, খনিজ এবং ছোট কণা বেশি থাকে, এবং এটি খুবই সঙ্কুচিত ও চিপচিপে।
    • এটি পানি শোষণ করে, তবে দীর্ঘ সময় ধরে ধরে রাখে, ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।
    • এঁটেল মাটি সাধারণত ভারী ও কঠিন হয়, যার কারণে এর সঞ্চালন ক্ষমতা কম থাকে।
  2. ব্যবহার:
    • এঁটেল মাটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কৃষিকাজের জন্য উপকারী, কারণ এতে মাটির পুষ্টি ধারণ ক্ষমতা বেশি থাকে।
    • তবে এর পানি নিষ্কাশনের সমস্যা থাকায়, জলাবদ্ধতা তৈরির কারণে এটি কিছু বিশেষ শস্যের জন্য উপযুক্ত নয়।
  3. অসুবিধা:
    • অতিরিক্ত জলাবদ্ধতার কারণে এটি সহজে কাদা হয়ে যায় এবং শিকড়ের বৃদ্ধির জন্য তা উপযুক্ত নয়।

পার্থক্য:

বৈশিষ্ট্যবেলে মাটিএঁটেল মাটি
গঠনবালি ও বড় কণা, হালকাছোট কণা, ঘন, চিপচিপে
পানি ধারণ ক্ষমতাকম, দ্রুত পানি প্রবাহিত হয়বেশি, পানি দীর্ঘ সময় ধরে থাকে
বৃষ্টি পরবর্তী অবস্থানদ্রুত শুকিয়ে যায়জলাবদ্ধ থাকে
উপযোগিতাতাজা উদ্ভিদের জন্য উপযুক্তমাটির পুষ্টি ধারণ ক্ষমতা বেশি, তবে জলাবদ্ধতা সমস্যা থাকতে পারে
কৃষি ব্যবহারদ্রুত সেচযোগ্য, তবে পানি শোষণের সমস্যাশস্যের জন্য ভালো, তবে জলাবদ্ধতা সমস্যা থাকতে পারে

এভাবে, বেলে মাটি এবং এঁটেল মাটির মধ্যে গঠন, পানি ধারণক্ষমতা এবং কৃষির উপযোগিতায় মূল পার্থক্য রয়েছে।

মাটির বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি?

মাটির বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

  1. রঙ: মাটির রঙ বিভিন্ন হতে পারে, যেমন লাল, কালো, ধূসর, যা তার খনিজ উপাদান ও জৈব পদার্থের উপস্থিতির উপর নির্ভর করে।
  2. কাঠামো: মাটির কাঠামো কণার মাপের উপর নির্ভর করে, যেমন বেলে, দো-আঁশ, বা এঁটেল মাটি, যা ফসলের জন্য ভিন্নভাবে উপযুক্ত।
  3. উর্বরতা: মাটিতে পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ তার উর্বরতা নির্ধারণ করে। নাইট্রোজেন, ফসফরাস, এবং পটাশিয়ামের মতো উপাদান বেশি থাকলে এটি উর্বর হয়।
  4. পানি ধারণ ক্ষমতা: মাটি কতটা পানি ধরে রাখতে পারে তা তার কণার আকারের উপর নির্ভর করে। এঁটেল মাটি বেশি পানি ধরে, আর বেলে মাটি কম ধরে।
  5. পিএইচ (pH): মাটির অম্লতা বা ক্ষারকতার স্তর তার পিএইচ নির্ধারণ করে, যা উদ্ভিদ বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে। মাটি সাধারণত সামান্য অম্লীয় থেকে সামান্য ক্ষারীয় হয়।
  6. বায়ু সংরক্ষণ: মাটিতে বায়ু থাকার ফলে উদ্ভিদের শিকড়ের বৃদ্ধি সহজ হয় এবং এটি মাটির স্বাস্থ্য বজায় রাখে।
  7. জৈব পদার্থ: মাটিতে জৈব পদার্থ বা হিউমাসের উপস্থিতি মাটিকে উর্বর করে এবং এতে উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগায়।

এই বৈশিষ্ট্যগুলো মাটিকে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদনের জন্য উপযোগী করে তোলে।

মাটির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

মাটির গুরুত্ব অপরিসীম। এটি আমাদের পরিবেশ ও জীবনের জন্য মৌলিক ভূমিকা পালন করে। মাটির প্রধান গুরুত্বগুলো নিচে দেওয়া হলো:

  1. উদ্ভিদের বৃদ্ধি: মাটি উদ্ভিদের জন্য পুষ্টি, পানি, এবং ভিত্তি সরবরাহ করে, যা খাদ্য উৎপাদনের মূল ভিত্তি।
  2. জীববৈচিত্র্যের আবাসস্থল: মাটি বিভিন্ন জীব যেমন কেঁচো, পোকামাকড়, ও ব্যাকটেরিয়ার আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে, যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।
  3. জল সংরক্ষণ: মাটি পানি শোষণ ও সংরক্ষণে সহায়তা করে, যা ভূগর্ভস্থ জলস্তরের পরিপূরণে ভূমিকা রাখে।
  4. পরিবেশগত ভারসাম্য: মাটি কার্বন ধারণ ও জলবায়ুর ওপর প্রভাব রাখে এবং মাটি ক্ষয়ের মাধ্যমে ভূমির গঠন রক্ষা করে।
  5. অর্থনৈতিক গুরুত্ব: কৃষি, শিল্প এবং নির্মাণসহ বিভিন্ন খাতে মাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা অর্থনীতির উন্নয়নেও সহায়ক।

মাটি ছাড়া প্রাণীকুলের জীবনধারা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা অসম্ভব। তাই মাটির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

মাটির অপকারিতা

মাটি আমাদের পরিবেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলেও কিছু ক্ষেত্রে এটি বিভিন্ন সমস্যার কারণ হতে পারে। মাটির গুণগত মান, অবস্থা এবং ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে এটি কিছু নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। নিচে মাটির কিছু অপকারিতা আলোচনা করা হলো:

১. ভূমিধস ও ক্ষয়

  • ভূমিধস (Landslide): পাহাড়ি অঞ্চলে নরম ও দুর্বল মাটি ভারী বৃষ্টিপাত বা ভূমিকম্পের ফলে ধসে যেতে পারে।
  • মাটি ক্ষয় (Soil Erosion): অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, নদীর স্রোত বা কৃষিকাজের ফলে উর্বর মাটি ধুয়ে গিয়ে কৃষিজমির উৎপাদনশীলতা কমে যেতে পারে।

২. মাটির দূষণ

  • রাসায়নিক দূষণ: শিল্পবর্জ্য, কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটিতে বিষাক্ত পদার্থ জমে কৃষিপণ্য ও ভূগর্ভস্থ পানির দূষণ ঘটাতে পারে।
  • প্লাস্টিক ও ইলেকট্রনিক বর্জ্য: অযথা আবর্জনা ফেলার ফলে মাটির গুণগত মান নষ্ট হয় এবং পরিবেশে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হয়।

৩. কৃষিতে সমস্যা

  • অমুরসিক্ত মাটি (Infertile Soil): কিছু অঞ্চলে মাটির উর্বরতা কম থাকায় ফসল উৎপাদন করা কঠিন হয়ে যায়।
  • লবণাক্ততা বৃদ্ধি: অতিরিক্ত সেচ বা অনিয়ন্ত্রিত কৃষিকাজের ফলে মাটিতে লবণের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা ফসলের জন্য ক্ষতিকর।

৪. স্থাপনা ও অবকাঠামোতে প্রভাব

  • নরম মাটি: কিছু এলাকায় মাটির গঠন দুর্বল হওয়ায় বড় ভবন বা স্থাপনা নির্মাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
  • ভূগর্ভস্থ পানির সমস্যা: কিছু মাটি পানি শোষণ করতে পারে না, যার ফলে জলাবদ্ধতা ও বন্যার সৃষ্টি হয়।

৫. স্বাস্থ্য ঝুঁকি

  • ধূলিকণা ও রোগ: শুষ্ক ও ধুলোময় মাটি শ্বাসকষ্ট ও এলার্জির কারণ হতে পারে।
  • ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী: দূষিত মাটিতে রোগ-সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও পরজীবী জন্ম নিতে পারে, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

মাটির সঠিক ব্যবহারের অভাব, দূষণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এটি অনেক সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই মাটির সংরক্ষণ, সঠিক কৃষি ব্যবস্থাপনা ও দূষণ রোধের মাধ্যমে এর অপকারিতা কমানো সম্ভব।

মাটি সম্পর্কিত ১০টি এমসিকিউ (MCQ) ও উত্তর

প্রশ্ন ১: মাটির প্রধান উপাদান কোনটি?

ক) অক্সিজেন
খ) নাইট্রোজেন
গ) খনিজ পদার্থ
ঘ) কার্বন

উত্তর: গ) খনিজ পদার্থ

প্রশ্ন ২: মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য সাধারণত কোনটি ব্যবহার করা হয়?

ক) প্লাস্টিক
খ) সার
গ) বালি
ঘ) লোহা

উত্তর: খ) সার

প্রশ্ন ৩: কোন ধরণের মাটি পানি সবচেয়ে বেশি ধরে রাখতে পারে?

ক) বেলে মাটি
খ) দোআঁশ মাটি
গ) এঁটেল মাটি
ঘ) কাঁদামাটি

উত্তর: গ) এঁটেল মাটি

প্রশ্ন ৪: মাটির স্তর কয়টি প্রধান ভাগে বিভক্ত?

ক) ২
খ) ৩
গ) ৪
ঘ) ৫

উত্তর: খ) ৩

প্রশ্ন ৫: কৃষির জন্য সবচেয়ে উপযোগী মাটি কোনটি?

ক) বেলে মাটি
খ) এঁটেল মাটি
গ) পাথুরে মাটি
ঘ) কাদামাটি

উত্তর: খ) এঁটেল মাটি

প্রশ্ন ৬: মাটির পিএইচ মান কোন উপাদানের ওপর নির্ভর করে?

ক) তাপমাত্রা
খ) পানি
গ) অম্ল ও ক্ষারের উপস্থিতি
ঘ) বায়ুচাপ

উত্তর: গ) অম্ল ও ক্ষারের উপস্থিতি

প্রশ্ন ৭: নিচের কোনটি মাটির ক্ষয় রোধে সহায়ক?

ক) বৃক্ষরোপণ
খ) অতিরিক্ত চাষাবাদ
গ) নদী কাটার বৃদ্ধি
ঘ) রাসায়নিক সার অতিরিক্ত ব্যবহার

উত্তর: ক) বৃক্ষরোপণ

প্রশ্ন ৮: হিউমাস কী?

ক) বালি ও কাঁদার মিশ্রণ
খ) জীবাশ্ম জ্বালানির অংশ
গ) মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর অবশিষ্টাংশ
ঘ) মাটির খনিজ উপাদান

উত্তর: গ) মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর অবশিষ্টাংশ

প্রশ্ন ৯: কোন মাটিতে পানি দ্রুত প্রবাহিত হয়?

ক) এঁটেল মাটি
খ) দোআঁশ মাটি
গ) বেলে মাটি
ঘ) কাদামাটি

উত্তর: গ) বেলে মাটি

প্রশ্ন ১০: ভারতে পাওয়া সবচেয়ে উর্বর মাটি কোনটি?

ক) ল্যাটেরাইট মাটি
খ) লাল মাটি
গ) কৃষ্ণ মাটি
ঘ) অ্যালুভিয়াল মাটি

উত্তর: ঘ) অ্যালুভিয়াল মাটি

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top