বিম্ব কাকে বলে? প্রতিবিম্ব কী? বিম্ব কত প্রকার ও কি কি?

বিম্ব হলো সাহিত্য বা বিজ্ঞানে এমন এক চিত্র বা দৃশ্য যা পাঠকের কল্পনায় কোনো দৃশ্য, শব্দ বা অনুভূতি সৃষ্টি করে। আজকে আমরা বিম্ব কাকে বলে? প্রতিবিম্ব কী? বিম্ব কত প্রকার ও কি কি? ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করব।

বিম্ব কাকে বলে

বিম্ব কাকে বলে?

সাহিত্য ও ভাষার প্রসঙ্গে বিম্ব বলতে এমন একটি চিত্র বা দৃশ্যকল্পকে বোঝানো হয়, যা পাঠকের মনে কোনো নির্দিষ্ট ভাব, অনুভূতি বা ভাবনার উদ্রেক ঘটায়। এটি সাধারণত উপমা, রূপক বা কাব্যিক ভাষার মাধ্যমে সৃষ্টি করা হয়। বিম্বের মাধ্যমে লেখক বা কবি কোনো বিষয়কে সহজে বোঝানোর জন্য একটি চিত্র তৈরি করেন, যা পাঠকের কল্পনায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

উদাহরণস্বরূপ:

  • “রক্তিম সূর্য অস্ত যেতে যেতে যেন রাঙা মেঘের আঁচল ফেলেছে আকাশে।”

এখানে রক্তিম সূর্যাস্ত এবং মেঘের সাথে আঁচলের তুলনা করে একটি বিম্ব তৈরি করা হয়েছে, যা সূর্যাস্তের সৌন্দর্যকে পাঠকের মনে জীবন্তভাবে ফুটিয়ে তোলে।

প্রতিবিম্ব কী? প্রতিবিম্ব কাকে বলে?

প্রতিবিম্ব হলো একটি বস্তুর প্রতিচ্ছবি বা প্রতিবর্তিত চিত্র, যা কোনো সমতল, মসৃণ পৃষ্ঠ, যেমন—দর্পণ বা পানিতে গঠিত হয়। এটি সাধারণত অপটিক্যাল বিজ্ঞানে আলো এবং এর প্রতিফলনের সাথে সম্পর্কিত। যখন কোনো বস্তুর উপর আলো পড়ে, তখন সেই আলো প্রতিফলিত হয়ে কোনো সমতল মসৃণ পৃষ্ঠে এসে পৌঁছালে সেই পৃষ্ঠে বস্তুর একটি প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। এই প্রতিফলিত চিত্রকে বলা হয় প্রতিবিম্ব।

প্রতিবিম্বের বৈশিষ্ট্য হলো এটি আসল বস্তুর মতোই একই আকার ও রঙ ধারণ করে, তবে তা উল্টো থাকে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা যখন আয়নায় নিজেকে দেখি, তখন আয়নায় দেখা প্রতিচ্ছবিটিই আমাদের প্রতিবিম্ব। প্রকৃতিতে একাধিক উদাহরণে আমরা প্রতিফলনের কারণে প্রতিবিম্ব দেখতে পাই, যেমন—পানির উপর গাছের বা আকাশের প্রতিচ্ছবি।

প্রতিবিম্ব শুধু বিজ্ঞানের অংশ নয়, এটি সাহিত্যে বা মনস্তাত্ত্বিক ভাবনায়ও ব্যবহার হয়। সাহিত্যে প্রতিবিম্ব শব্দটি অনেক সময় একজন ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ মনোভাব বা আবেগের বহিঃপ্রকাশ বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। এভাবে, প্রতিবিম্ব বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হতে পারে।

আরও পড়ুন: হাকেল নীতি কি? হাকেল তত্ত্ব কী? অ্যারোমেটিসিটি কাকে বলে?

আবার বলা যায়, বিম্ব বা প্রতিবিম্ব হলো কোনো বস্তুর আলোকীয় প্রতিফলন বা প্রতিসরণের মাধ্যমে গঠিত চিত্র। এই চিত্রটি সাধারণত বস্তুটির অনুরূপ হয়ে থাকে, কিন্তু এর আকার বা অবস্থানে ভিন্নতা থাকতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, আয়নার সামনে দাঁড়ালে যে চিত্র দেখা যায়, সেটি হলো বিম্ব। এখানে ব্যক্তিটি বস্তু এবং আয়না হলো মাধ্যম, যার মাধ্যমে বিম্ব গঠিত হয়েছে।

বিম্ব কত প্রকার ও কি কি?

বিম্ব সাধারণত দুটি প্রকারের হয়:

১. দৃশ্যবিম্ব (Visual Imagery)

দৃশ্যবিম্ব হলো এমন এক ধরনের বিম্ব, যা পাঠকের কল্পনায় চাক্ষুষ চিত্র ফুটিয়ে তোলে। লেখক বা কবি যখন কোনো দৃশ্যের বর্ণনা দেন, তা পাঠকের মনে একটি স্পষ্ট চিত্র তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ, “নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা” – এখানে পাঠকের মনে একটি নীল আকাশে সাদা মেঘের দৃশ্য ভেসে ওঠে।

২. শব্দবিম্ব (Auditory Imagery)

শব্দবিম্ব এমন একটি বিম্ব, যা পাঠকের কল্পনায় শব্দ বা সুরের অনুভূতি জাগ্রত করে। লেখক বা কবি যখন কোনো শব্দের উল্লেখ করেন, তা পাঠকের মনে সেই শব্দের অনুরণন সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ, “পাখির কিচির-মিচির আওয়াজে সকালটা সজীব হয়ে উঠল” – এখানে শব্দবিম্বের মাধ্যমে পাখির আওয়াজ অনুভূত হয়।

এছাড়াও, সাহিত্য ও কাব্যে প্রায়ই অন্যান্য প্রকারের বিম্ব ব্যবহৃত হয়, যেমন গন্ধবিম্ব (Olfactory Imagery), স্বাদবিম্ব (Gustatory Imagery) এবং স্পর্শবিম্ব (Tactile Imagery)। প্রতিটি বিম্ব পাঠকের অনুভূতিকে আরো গভীরভাবে জাগ্রত করে কল্পনার জগৎকে সমৃদ্ধ করে তোলে।

সদ বিম্ব ও অসদ বিম্ব কাকে বলে?

সদ বিম্ব এবং অসদ বিম্ব হল অপটিক্সের (আলোকবিজ্ঞানের) দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা আলো ও প্রতিফলনের মাধ্যমে গঠিত চিত্রের প্রকৃতি নির্ধারণ করে।

সদ বিম্ব (Real Image)

সদ বিম্ব হলো এমন একটি চিত্র, যা প্রকৃতপক্ষে একটি পর্দায় ধরা যায়। এটি প্রকৃত আলো রশ্মির সমাবেশের ফলে গঠিত হয়। এই ধরনের চিত্র সাধারণত উত্তল লেন্স বা অবতল দর্পণ দ্বারা তৈরি হয় এবং এটি সবসময় উল্টো হয়। উদাহরণস্বরূপ, প্রোজেক্টরে তৈরি করা চিত্রটি একটি সদ বিম্ব, যা একটি পর্দায় দেখা যায়।

অসদ বিম্ব (Virtual Image)

অসদ বিম্ব হলো এমন একটি চিত্র, যা বাস্তবে কোনো পর্দায় ধরা যায় না, বরং তা মনে কল্পনা করা যায়। এটি আলো রশ্মির বিস্তারের ফলে তৈরি হয়। এ ধরনের চিত্র সাধারণত অবতল লেন্স বা উত্তল দর্পণ দ্বারা গঠিত হয় এবং এটি সাধারণত সোজা থাকে। উদাহরণস্বরূপ, আয়নায় নিজের চেহারা দেখতে পাওয়া একটি অসদ বিম্ব।

সংক্ষেপে, সদ বিম্ব পর্দায় ধরা যায় এবং বাস্তব, আর অসদ বিম্ব পর্দায় ধরা যায় না এবং এটি কল্পিত বা প্রতিবর্তিত চিত্র।

সদ বিম্ব ও অসদ বিম্বের মধ্যে পার্থক্য

সদ বিম্ব এবং অসদ বিম্ব (Real Image এবং Virtual Image) হল আলোর প্রতিফলন বা প্রতিসরণের মাধ্যমে গঠিত দুটি ভিন্ন ধরনের চিত্র। এদের মধ্যে পার্থক্যগুলো হলো:

বৈশিষ্ট্যসদ বিম্ব (Real Image)অসদ বিম্ব (Virtual Image)
সংজ্ঞাআলোর রশ্মি এক স্থানে মিলিত হয়ে যে চিত্র সৃষ্টি করে।আলোর রশ্মি বিচ্ছুরিত হয়ে যে চিত্র তৈরি হয়।
পর্দায় ধরাএটি প্রকৃতপক্ষে পর্দায় ধরা যায়।এটি পর্দায় ধরা যায় না।
চিত্রের ধরনচিত্রটি উল্টো (Inverted) হয়।চিত্রটি সোজা (Upright) হয়।
উৎপত্তিস্থলএটি আলো রশ্মির বাস্তব সংযোগস্থলে (Convergence) সৃষ্টি হয়।এটি আলো রশ্মির ছদ্ম সংযোগস্থলে (Divergence) সৃষ্টি হয়।
উদাহরণক্যামেরার লেন্সে তৈরি ছবি, প্রজেক্টরের ছবি।সমতল আয়নায় নিজের মুখ, উত্তল আয়নায় গাড়ির পিছনের দৃশ্য।
  • সদ বিম্ব: এটি বাস্তব এবং প্রকৃত আলোর মিলনে গঠিত, তাই এটি পর্দায় ধরা যায়।
  • অসদ বিম্ব: এটি কেবল একটি চিত্র যা পর্দায় ধরা যায় না, তবে আয়নায় দেখা যায়।

প্রতিবিম্ব কত প্রকার ও কি কি?

প্রতিবিম্ব হল একটি বস্তু থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে যখন কোনো পৃষ্ঠে প্রতিফলিত হয়, তখন গঠিত চিত্র। এটি প্রধানত দুই প্রকারের হয়:

১. বাস্তব প্রতিবিম্ব (Real Image):

  • বাস্তব প্রতিবিম্ব হলো এমন চিত্র যা কোনো পৃষ্ঠে প্রকৃতপক্ষে সৃষ্টি হয় এবং পর্দায় ধরা যায়।
  • এটি আলো রশ্মির সংযোগস্থলে (convergence) সৃষ্টি হয়।
  • চিত্রটি উল্টো (inverted) হয়।
  • উদাহরণ: লেন্স বা আয়নায় উৎপন্ন চিত্র যেমন প্রজেক্টরে দেখা যায়।

২. কাল্পনিক প্রতিবিম্ব (Virtual Image):

  • কাল্পনিক প্রতিবিম্ব হলো এমন চিত্র যা পর্দায় ধরা যায় না এবং শুধুমাত্র আয়নার ভেতরে বা কোনো পৃষ্ঠে দেখা যায়।
  • এটি আলো রশ্মির বিচ্ছুরণস্থলে (divergence) সৃষ্টি হয়।
  • চিত্রটি সোজা (upright) হয়।
  • উদাহরণ: সমতল আয়নায় নিজের মুখের প্রতিবিম্ব।

প্রতিবিম্বের অন্যান্য ধরন (আলো এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী):

  1. সমতল প্রতিবিম্ব (Plane Reflection): সমতল আয়নায় তৈরি চিত্র।
  2. গোলীয় প্রতিবিম্ব (Spherical Reflection): উত্তল (Convex) ও অবতল (Concave) আয়নায় তৈরি চিত্র।
  3. সম্পূর্ণ প্রতিফলন প্রতিবিম্ব (Total Internal Reflection): স্বচ্ছ মাধ্যমের ভেতরে আলোর সম্পূর্ণ প্রতিফলনের ফলে সৃষ্ট চিত্র।

প্রতিবিম্বের প্রকারভেদ এর গঠন এবং আলো প্রতিফলনের প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে।

প্রতিবিম্ব ও তার প্রকারভেদ

প্রতিবিম্ব (Image) হল কোনো বস্তুর আলোর প্রতিফলন বা প্রতিসরণের ফলে গঠিত প্রতিচ্ছবি। এটি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন সমতল প্রতিবিম্ব, গোলীয় প্রতিবিম্ব এবং সম্পূর্ণ প্রতিফলন দ্বারা গঠিত প্রতিবিম্ব। নিচে এসব প্রতিবিম্বের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করা হলো।

১. সমতল প্রতিবিম্ব (Plane Mirror Image)

যখন কোনো বস্তু সমতল দর্পণের (Plane Mirror) সামনে থাকে, তখন তার যে প্রতিবিম্ব তৈরি হয়, তাকে সমতল প্রতিবিম্ব বলে।

বৈশিষ্ট্য:

  • এটি অবাস্তব (Virtual) অর্থাৎ পর্দায় ধরা যায় না।
  • বিম্বটি সমান আকারের (Same size as object) হয়।
  • প্রতিফলন ঘটলে ডান-বাম বিনিময় (Lateral Inversion) ঘটে।
  • বস্তু ও প্রতিবিম্ব দর্পণের সমান দূরত্বে অবস্থান করে।

উদাহরণ:

  • সাধারণ কাচের আয়নায় মুখের প্রতিবিম্ব।

২. গোলীয় প্রতিবিম্ব (Spherical Mirror Image)

যদি দর্পণ সমতলের পরিবর্তে গোলাকার হয়, তাহলে তার দ্বারা গঠিত প্রতিবিম্বকে গোলীয় প্রতিবিম্ব বলা হয়। গোলীয় দর্পণ দুই প্রকারের হয়—অন্তঃপ্রতিবর্ত দর্পণ (Concave Mirror) এবং বহিঃপ্রতিবর্ত দর্পণ (Convex Mirror)।

ক) অন্তঃপ্রতিবর্ত দর্পণ (Concave Mirror)

এটি একটি অবতল দর্পণ, যেখানে আলোর প্রতিফলন অভ্যন্তরীণ বক্রতায় ঘটে।

বৈশিষ্ট্য:

  • বস্তু অবস্থানের ওপর নির্ভর করে বাস্তব (Real) অথবা অবাস্তব (Virtual) উভয় ধরনের প্রতিবিম্ব তৈরি হতে পারে।
  • প্রতিফলিত বিম্ব বড় বা ছোট হতে পারে।
  • আলোর রশ্মি প্রধান ফোকাসে মিলিত হলে বাস্তব ও উল্টো (Inverted) বিম্ব গঠিত হয়।

ব্যবহার:

  • গাড়ির হেডলাইটে আলো ফোকাস করতে।
  • দাঁতের চিকিৎসায় (Dentist Mirror)
  • সৌর চুল্লি (Solar Furnace) তৈরিতে।

খ) বহিঃপ্রতিবর্ত দর্পণ (Convex Mirror)

এটি একটি উত্তল দর্পণ, যেখানে আলোর প্রতিফলন বাহ্যিক বক্রতায় ঘটে।

বৈশিষ্ট্য:

  • অবাস্তব (Virtual) এবং সোজা (Upright) বিম্ব তৈরি করে।
  • বিম্ব বস্তুর তুলনায় সবসময় ছোট হয়।
  • বিস্তৃত এলাকা দেখতে সাহায্য করে।

ব্যবহার:

  • গাড়ির পিছনের দৃশ্যপট আয়না (Rear-View Mirror) হিসেবে।
  • দোকান ও হাসপাতালের কর্নারে নিরাপত্তার জন্য।

৩. সম্পূর্ণ প্রতিফলন দ্বারা গঠিত প্রতিবিম্ব (Total Internal Reflection Image)

যখন কোনো আলোর রশ্মি কম ঘন অপটিক্যাল মাধ্যম থেকে বেশি ঘন মাধ্যমের সংযোগস্থলে এমনভাবে প্রতিসরিত হয় যে, তা পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে, তখন এই ঘটনাকে সম্পূর্ণ প্রতিফলন (Total Internal Reflection, TIR) বলা হয় এবং এর ফলে যে প্রতিবিম্ব তৈরি হয় তাকে সম্পূর্ণ প্রতিফলন প্রতিবিম্ব বলা হয়।

শর্তসমূহ:

  • আলোকে কম ঘন মাধ্যম (যেমন: বায়ু) থেকে বেশি ঘন মাধ্যমের (যেমন: পানি বা কাঁচ) সংযোগস্থলে প্রবেশ করতে হবে।
  • আপতন কোণ সমালোচনামূলক কোণের (Critical Angle) চেয়ে বেশি হতে হবে।

ব্যবহার:

  • প্রিজমের মাধ্যমে অপটিক্যাল যন্ত্র (Binoculars, Periscope) তৈরি।
  • ডায়মন্ডের উজ্জ্বলতা: হীরার কেটে তোলার সময় সম্পূর্ণ প্রতিফলন ব্যবহার করা হয়।
  • অপটিক্যাল ফাইবার (Optical Fiber): টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেটে ব্যবহৃত হয়।

সমতল দর্পণ, গোলীয় দর্পণ এবং সম্পূর্ণ প্রতিফলন—এই তিনটি পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবিম্ব তৈরি হয়। সমতল দর্পণে অবাস্তব বিম্ব তৈরি হয়, গোলীয় দর্পণে বাস্তব বা অবাস্তব দুটোই হতে পারে, আর সম্পূর্ণ প্রতিফলনের ফলে অত্যন্ত উজ্জ্বল ও কার্যকর বিম্ব তৈরি হয়।

বিম্ব আর প্রতিবিম্বের মধ্যে পার্থক্য কি কি?

বিম্ব এবং প্রতিবিম্ব হল আলোর উপর ভিত্তি করে গঠিত দুটি পৃথক ধারণা। এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যগুলো হলো:

বৈশিষ্ট্যবিম্বপ্রতিবিম্ব
সংজ্ঞাআলোর উত্স বা প্রকৃত বস্তু, যা আলো বিকিরণ করে।প্রতিফলিত আলোর মাধ্যমে আয়না বা পৃষ্ঠে তৈরি হওয়া চিত্র।
অবস্থানবাস্তব স্থানে অবস্থিত।আয়না বা প্রতিফলিত পৃষ্ঠের মাধ্যমে গঠিত।
আলোর ভূমিকাআলোর মূল উৎস থেকে সরাসরি নির্গত হয়।প্রতিফলনের মাধ্যমে তৈরি হয়।
উদাহরণমোমবাতির শিখা, সূর্য।সমতল আয়নায় দেখা নিজের মুখের ছবি।
পর্দায় ধরাধরা যায় না।বাস্তব প্রতিবিম্ব পর্দায় ধরা যায়; কাল্পনিক প্রতিবিম্ব ধরা যায় না।
অসীম বা প্রকৃত অবস্থানস্থির এবং নির্দিষ্ট।আয়নার অবস্থানের উপর নির্ভরশীল।
  • বিম্ব হলো বস্তু যা আলো নির্গত করে বা প্রতিফলিত করে।
  • প্রতিবিম্ব হলো সেই আলো আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে তৈরি হওয়া চিত্র।
    এদের পার্থক্য আলোর উৎস ও প্রতিফলনের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়।

বিম্বের ব্যবহার

“বিম্ব” শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয় এবং তার প্রেক্ষিত অনুযায়ী এর ব্যবহার ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত “বিম্ব” শব্দটি নিচের কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়:

১. সাহিত্য ও অলংকারে

সাহিত্যে “বিম্ব” বলতে কোনো কিছুর প্রতিচ্ছবি বা রূপক চিত্র বোঝায়। কবিতা ও গল্পে বিম্বের ব্যবহার পাঠকের মনে দৃশ্য বা অনুভূতির স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে।
উদাহরণ:

  • “সূর্য অস্ত যাচ্ছে, যেন রক্তিম আগুনে পুরো আকাশ ভরে গেছে।” (এখানে সূর্যাস্তের বিম্ব দেওয়া হয়েছে)
  • “জীবন যেন এক বিশাল সাগর, যেখানে আমরা সবাই নাবিক।” (এটি বিম্বের মাধ্যমে জীবনের একটি চিত্র তুলে ধরেছে)

২. পদার্থবিজ্ঞানে (Physics)

বিম্ব শব্দটি পদার্থবিজ্ঞানে আলোর প্রতিফলন বা প্রতিসরণের ফলে গঠিত প্রতিবিম্ব বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।

  • বাস্তব বিম্ব (Real Image): যে বিম্ব পর্দায় ধরা যায় (যেমন: উত্তল লেন্সের মাধ্যমে তৈরি হওয়া প্রকৃত ছবি)।
  • অবাস্তব বিম্ব (Virtual Image): যে বিম্ব পর্দায় ধরা যায় না, কেবল চোখে দেখা যায় (যেমন: সমতল দর্পণে মুখের প্রতিবিম্ব)।

৩. গণিত ও জ্যামিতিতে

  • জ্যামিতিতে কোনো বস্তু বা বিন্দুর প্রতিবিম্ব বোঝাতে বিম্ব শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
  • কার্টেসিয়ান কো-অর্ডিনেট সিস্টেমে বিম্বের স্থানান্তর বা প্রতিসরণ বোঝানো হয়।

৪. মনোবিজ্ঞান ও দর্শনে

  • মানসিক প্রতিচ্ছবি বা কল্পনার মাধ্যমে বিম্ব তৈরি হয়, যা আমাদের চিন্তা ও অনুভূতির ওপর প্রভাব ফেলে।
  • দর্শনে বিম্ব মানে বাস্তবতা সম্পর্কে আমাদের ধ্যানধারণার প্রতিফলন।

৫. প্রযুক্তি ও মিডিয়ায়

  • কম্পিউটার গ্রাফিক্স: ডিজিটাল ইমেজ বা বিম্ব তৈরি করা হয় বিভিন্ন সফটওয়্যার দিয়ে।
  • ফটোগ্রাফি: ক্যামেরার লেন্সের মাধ্যমে বিম্ব তৈরি হয়, যা আমরা ছবি হিসেবে দেখি।

বিম্বের ব্যবহার সাহিত্য, পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, মনোবিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর সঠিক প্রয়োগ বিষয়ভেদে বিভিন্নভাবে চিন্তা ও বিশ্লেষণ করা হয়।

বিম্ব সম্পর্কিত ১০টি এমসিকিউ

নীচে বিম্ব সম্পর্কিত ১০টি এমসিকিউ (Multiple Choice Questions) ও সঠিক উত্তর দেওয়া হলো—

  1. বিম্ব কী?
    ক) আলোর প্রতিফলন
    খ) কোনো বস্তুর প্রতিচ্ছবি
    গ) আলোর প্রতিসরণ
    ঘ) আলোর বিচ্ছুরণ
    উত্তর: খ) কোনো বস্তুর প্রতিচ্ছবি
  2. যে বিম্ব প্রকৃতপক্ষে পর্দায় ধরা যায়, তাকে কী বলে?
    ক) কাল্পনিক বিম্ব
    খ) বাস্তব বিম্ব
    গ) প্রতিবিম্ব
    ঘ) সঠিক নয়
    উত্তর: খ) বাস্তব বিম্ব
  3. সমান্তরাল সমতল দর্পণে গঠিত বিম্ব কেমন হয়?
    ক) বাস্তব
    খ) কাল্পনিক
    গ) উল্টো
    ঘ) আবর্তিত
    উত্তর: খ) কাল্পনিক
  4. উত্তল দর্পণে গঠিত বিম্ব সর্বদা কেমন হয়?
    ক) কাল্পনিক, অবাস্তব ও সংকুচিত
    খ) বাস্তব ও উল্টো
    গ) কাল্পনিক ও বড়
    ঘ) বাস্তব ও সঠিক
    উত্তর: ক) কাল্পনিক, অবাস্তব ও সংকুচিত
  5. অভিসারী লেন্সের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?
    ক) এটি আলোর প্রতিসরণ ঘটায়
    খ) এটি বিম্বকে ছোট করে
    গ) এটি আলোর প্রতিফলন ঘটায়
    ঘ) এটি বিম্বকে উল্টো করে
    উত্তর: ক) এটি আলোর প্রতিসরণ ঘটায়
  6. সমতল দর্পণে বিম্ব কেমন হয়?
    ক) বাস্তব
    খ) কাল্পনিক
    গ) উল্টো
    ঘ) আবর্তিত
    উত্তর: খ) কাল্পনিক
  7. অবতল দর্পণে গঠিত বিম্ব কখন বাস্তব ও উল্টো হয়?
    ক) যখন বস্তু ফোকাসের বাইরে থাকে
    খ) যখন বস্তু ফোকাসের মধ্যে থাকে
    গ) যখন বস্তু দর্পণের কেন্দ্রস্থলে থাকে
    ঘ) সব সময়
    উত্তর: ক) যখন বস্তু ফোকাসের বাইরে থাকে
  8. অবতল দর্পণে ফোকাসের মধ্যে রাখা বস্তুটির বিম্ব কেমন হবে?
    ক) বাস্তব ও ছোট
    খ) কাল্পনিক, বড় ও সোজা
    গ) কাল্পনিক ও উল্টো
    ঘ) বাস্তব ও বড়
    উত্তর: খ) কাল্পনিক, বড় ও সোজা
  9. ক্যামেরার লেন্সের মাধ্যমে গঠিত বিম্ব কেমন হয়?
    ক) বাস্তব ও উল্টো
    খ) কাল্পনিক ও সোজা
    গ) বাস্তব ও সোজা
    ঘ) কাল্পনিক ও উল্টো
    উত্তর: ক) বাস্তব ও উল্টো
  10. চোখের রেটিনায় গঠিত বিম্ব কেমন হয়?
    ক) কাল্পনিক ও সোজা
    খ) বাস্তব ও উল্টো
    গ) বাস্তব ও সোজা
    ঘ) কাল্পনিক ও উল্টো
    উত্তর: খ) বাস্তব ও উল্টো

এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top