আত্তাহিয়াতু বাংলা উচ্চারণ ও আত্তাহিয়্যাতুর অর্থসহ ফজিলত

আত্তাহিয়াতু হলো নামাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা তাশাহহুদ নামেও পরিচিত। এটি নামাজের মধ্যে দ্বিতীয় রাকআতে বা বসে পড়া অবস্থায় পড়া হয়। তিন অথবা চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজের দুই রাকাতের পর বৈঠক করা ওয়াজিব। (বুখারি: ১/১১৪, হাদিস: ৮২৮) প্রথম ও শেষ উভয় বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পড়া ওয়াজিব। (বুখারি ১/১১৫: ৮৩০, ৮৩১, মুসলিম: ১/১৯৪, ১৭৩, হাদিস : ৪৯৮, ৪০২, ৪০৩, তিরমিজি: ১/৮৯, হাদিস: ৩৯১)। আত্তাহিয়াতু ইসলামী শিক্ষায় আল্লাহর প্রতি প্রশংসা, নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি সালাম এবং সৎ বান্দাদের প্রতি শান্তির প্রার্থনা হিসেবে একটি দোয়া। আজকে আমরা আত্তাহিয়াতু বাংলা উচ্চারণ ও আত্তাহিয়্যাতুর অর্থসহ ফজিলত ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করব।

আত্তাহিয়াতু বাংলা উচ্চারণ

আত্তাহিয়াতুর উদ্দেশ্য

  1. আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা: আত্তাহিয়াতুতে আল্লাহর প্রতি সকল শ্রেষ্ঠত্ব এবং দানের স্বীকৃতি দেয়া হয়।
  2. নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি সম্মান: নবী (সা.)-এর প্রতি শান্তি এবং রহমত প্রার্থনা করা হয়।
  3. সৎ বান্দাদের প্রতি শুভেচ্ছা: আল্লাহর সকল সৎ বান্দাদের প্রতি শান্তি কামনা করা হয়।
  4. তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য: আল্লাহর একত্ব এবং নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর রিসালাতের সাক্ষ্য দেওয়া হয়।

আত্তাহিয়াতু বাংলা উচ্চারণ | তাশাহুদ বাংলা উচ্চারণ ছবি

আত্তাহিয়াতু এর বাংলা উচ্চারণ হলো:

আত্তাহিয়াতু লিল্লাহি, ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত তায়িবাতু। আসসালামু আলাইকা অ্যায়্যুহা নবী, ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আসসালামু আলাইনাস ওয়া আলা ইবাদাল্লাহি সলিহীন। আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মোহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ।

এটি নামাজের মধ্যে তাশাহহুদে পড়া হয়। আরও পড়ুন : দরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ | দূরুদ শরিফ আরবি ও বাংলা

আত্তাহিয়াতুর বাংলা অনুবাদ

আত্তাহিয়াতু এর বাংলা অনুবাদ হলো:

“সব শ্রেষ্ঠত্ব এবং সমস্ত দান আল্লাহর জন্য। সমস্ত সালাত ও সকল সুন্দর কথা আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর সকল সৎ বান্দাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর রসূল।” (বুখারি: ৮৩৫, ৬২৩০, মুসলিম: ৪০২, আবু দাউদ: ৯৬৮, নাসায়ি: ১২৯৮, ইবনে মাজাহ: ৮৯৯, আহমদ: ৪১০১, মেশকাত: ৯০৯)

এটি নামাজের মধ্যে তাশাহহুদ পড়ার সময় বলা হয় এবং এটি মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া।

আত্তাহিয়াতু কোন সুরার অংশ?

আত্তাহিয়াতু কুরআনের কোন সুরার অংশ নয়। এটি মুসলমানদের নামাজের (সালাত) মধ্যে তাশাহহুদ হিসেবে পড়া হয়। এটি একটি বিশেষ দোয়া যা নামাজের দ্বিতীয় রাকআতে বসে পড়ার সময় উচ্চারণ করা হয়।

তবে, আত্তাহিয়াতুর ধারণা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে, যেমন আল্লাহর একত্ব (তাওহীদ) এবং নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর রিসালাত।

আত্তাহিয়াতুর মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা, নবী (সা.)-এর প্রতি সালাম এবং সৎ বান্দাদের প্রতি শান্তি কামনা করা।

আত্তাহিয়্যাতুর অর্থসহ ফজিলত

আত্তাহিয়াতু হল নামাজের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া, যা তাশাহহুদ হিসেবেও পরিচিত। এর অর্থ এবং ফজিলত নিম্নরূপ:

অর্থ:

আত্তাহিয়াতু এর অর্থ হলো:

“সব শ্রেষ্ঠত্ব এবং সমস্ত দান আল্লাহর জন্য। সমস্ত সালাত ও সকল সুন্দর কথা আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর সকল সৎ বান্দাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর রসূল।”

ফজিলত:

আত্তাহিয়াতুর ফজিলত অনেক। এর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য হলো:

  1. নামাজের অংশ: এটি নামাজের অত্যাবশ্যক অংশ, এবং এটি তাশাহহুদে বলা হয়। তাই নামাজের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
  2. আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা: এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে মুসলিমগণ আল্লাহর প্রতি তাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করে।
  3. নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি সম্মান: নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি শান্তি ও রহমত প্রার্থনা করার মাধ্যমে মুসলিমরা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
  4. সৎ বান্দাদের প্রতি দোয়া: আত্তাহিয়াতুতে সৎ বান্দাদের প্রতি শান্তির প্রার্থনা করা হয়, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের ঐক্য ও ভালোবাসা বৃদ্ধি করে।
  5. দোয়ার গ্রহণযোগ্যতা: নামাজের মধ্যে এই দোয়া পাঠ করা হয়, এবং বিশেষভাবে রুকু এবং সিজদার মধ্যবর্তী অবস্থায় আল্লাহর কাছে দোয়া গ্রহণযোগ্য হয়।
  6. আধ্যাত্মিক শান্তি: আত্তাহিয়াতু পাঠ করার ফলে ব্যক্তির আধ্যাত্মিক শান্তি ও পবিত্রতা অর্জিত হয়, যা নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার একটি মাধ্যম।

মোটকথা, আত্তাহিয়াতু মুসলিমদের নামাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এর মাধ্যমে তারা আল্লাহর নিকট তাদের অন্তরের আবেগ ও অনুভূতি প্রকাশ করে।

আত্তাহিয়াতু কখন পড়তে হয়?

আত্তাহিয়াতু নামাজের মধ্যে তাশাহহুদ হিসেবে পড়া হয়, যা সাধারণত নামাজের দ্বিতীয় রাকআতে বসে পড়া হয়। এটি বিশেষভাবে নিম্নলিখিত সময়ে পড়তে হয়:

  1. নামাজের দ্বিতীয় রাকআতে: যখন নামাজের দ্বিতীয় রাকআতে পৌঁছানো হয়, তখন বসে আত্তাহিয়াতু পড়তে হয়।
  2. যেকোনো দুই রাকআতের নামাজের শেষে: যেমন, ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব, এবং ঈদের নামাজ। এই নামাজগুলোর দ্বিতীয় রাকআতে আত্তাহিয়াতু পড়া হয়।
  3. নামাজে খতিবের বক্তৃতা: জুমার নামাজে খতিবের বক্তব্যের আগে আত্তাহিয়াতু পড়া হয়, তবে এখানে এটি আলাদা ভাবে বলা হয়।
  4. তাকবিরের আগে: নামাজ শেষের সময়, যখন আসন গ্রহণ করা হয়, তখনও আত্তাহিয়াতু পড়া হয়।

এই সময়ে আত্তাহিয়াতু পাঠ করে মুসলমানরা আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা, নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি সালাম এবং সৎ বান্দাদের প্রতি শান্তি কামনা করে।

আত্তাহিয়াতু হলো সালাতের (নামাজ) একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া, যা প্রতিটি সালাতের তাশাহুদে (দুই রাকাত পর বা শেষ রাকাতে) বসে পড়া হয়।

যখন আত্তাহিয়াতু পড়তে হয়

  1. প্রতিটি নামাজের দুই রাকাত পর তাশাহুদের জন্য বসলে।
  2. তিন বা চার রাকাতের নামাজে শেষ রাকাতের তাশাহুদের সময়।

কীভাবে আত্তাহিয়াতু পড়তে হয়:

  1. তাশাহুদের জন্য বসা:
    • মাটিতে বসে ডান পা উঁচু রাখা এবং বাম পায়ের ওপর বসা।
    • হাতগুলো উরুর ওপর রাখা।
    • শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে তাওহীদ (একত্ব) প্রকাশ করা।
  2. আত্তাহিয়াতু দোয়া:
    “আত্তাহিয়াতু লিল্লাহি ওয়াছ্ সালাওয়াতু ওয়াত তাইয়িবাতু।
    আস্ সালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
    আস্ সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন।
    আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসূলুহ।”
  3. মনোযোগ ও খুশু (সম্মান) সহকারে ধীরে ধীরে দোয়াটি পড়তে হবে।

গুরুত্ব:

  • এটি আল্লাহর প্রতি বন্দেগি এবং নবী (সা.)-এর প্রতি সালাম জানানোর অংশ।
  • এটি নামাজের একটি অপরিহার্য অংশ।
  • নামাজের শুদ্ধতার জন্য এটি আবশ্যক।

আত্তাহিয়াতুর তাৎপর্য

আত্তাহিয়াতু দোয়ার তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর এবং তা ইসলামের মূল শিক্ষা ও আকীদার প্রতিফলন। এটি আল্লাহর প্রতি প্রশংসা, নবী (সা.)-এর প্রতি সালাম, এবং নিজের ও সকল নেককার বান্দার জন্য শান্তি ও কল্যাণ কামনা প্রকাশ করে।

আত্তাহিয়াতুর তাৎপর্য:

  1. আল্লাহর প্রতি বন্দনা:
    • “আত্তাহিয়াতু লিল্লাহি ওয়াছ্ সালাওয়াতু ওয়াত তাইয়িবাতু।”
      এখানে আল্লাহর প্রতি সমস্ত প্রশংসা, ইবাদত, এবং পবিত্রতা নিবেদন করা হয়।
  2. নবী (সা.)-এর প্রতি সালাম:
    • “আস্ সালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।”
      নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রতি সালাম, আল্লাহর দয়া ও বরকতের আবেদন করা হয়।
  3. নিজ ও অন্যদের জন্য শান্তি:
    • “আস্ সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন।”
      নিজের এবং সকল সৎ বান্দার জন্য শান্তি কামনা করা হয়।
  4. তাওহীদ ও রিসালাতের স্বীকৃতি:
    • “আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসূলুহ।”
      এখানে আল্লাহর একত্ব এবং মুহাম্মাদ (সা.)-এর নবুওয়াতের প্রতি সাক্ষ্য দেওয়া হয়।

গুরুত্ব:

  • এটি আল্লাহ ও বান্দার সম্পর্কের প্রতিফলন।
  • তাওহীদ, নবুওয়াত, এবং ইসলামের মূল শিক্ষা ধারণ করে।
  • এটি মুসলিমের ইবাদত ও দোয়ার কেন্দ্রবিন্দু।

এই দোয়া মানুষের মন ও আত্মাকে পবিত্র করে এবং আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করে।

নবী (সা:) কখন কখন আত্তাহিয়াতু পড়তেন?

আত্তাহিয়াতু হল এক গুরুত্বপূর্ণ দুআ (প্রার্থনা) যা ইসলামে নামাজ (সালাত) এর মধ্যে বিশেষভাবে পড়া হয়। এটি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ী নামাজের তৃতীয় বা চতুর্থ রাকআত (যত রাকআত নামাজে থাকে) এর মধ্যে পড়া হয়।

📜 আত্তাহিয়াতু পড়ার সময়:

  1. নামাজের দ্বিতীয় বা চতুর্থ রাকআতে
    নামাজে যখন তাশাহহুদ (অথবা আত্তাহিয়াতু) পড়তে হয়, এটি সাধারণত দ্বিতীয় রাকআত বা চতুর্থ রাকআতের মধ্যে পড়া হয়, যখন আপনি সিজদা থেকে উঠে বসে থাকেন।
  2. নামাজের পর
    যেহেতু এটি একটি অন্তর্ভুক্ত দুআ নামাজের অংশ, তাই নবী (সা.) সাধারণত নামাজে দাঁড়িয়ে থাকাকালীন সময়ে আত্তাহিয়াতু পড়তেন। এর মাধ্যমে তাঁর পবিত্রতা এবং আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশিত হতো।

📝 আত্তাহিয়াতুর মূল দুআ:

আত্তাহিয়াতু শব্দের অর্থ “সব সম্মান, পবিত্রতা ও ধন্যবাদ আল্লাহর জন্য, যিনি পৃথিবী ও আকাশের সৃষ্টিকর্তা”। এর মধ্যে নবীর প্রতি সালাম ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনও করা হয়।

দুআটি হল:

“আত্তাহিয়াতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওতু ওয়াত তাইয়িবাতু, আস সালামু আলাইকা আয়্যুহাল নবিয়ু, ওয়াহামাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু, আস সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহি সওলিহীন। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শরীক লাহু, ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়রাসুলুহ।”

অর্থ:
“সব সম্মান, পবিত্রতা এবং ধন্যবাদ আল্লাহর জন্য। সালাম ও শান্তি নবীর উপর, যিনি আল্লাহর প্রেরিত। আমাদের উপর এবং আল্লাহর সৎ সেবকদের উপরও শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি একক, তার কোন শরিক নেই, এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসূল।”

আত্তাহিয়াতু নামাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা নবী (সা.) সাধারণত দ্বিতীয় বা চতুর্থ রাকআতে পড়তেন। এটি আল্লাহর প্রতি আনুগত্য এবং নবীর প্রতি সম্মান প্রকাশ করার একটি মাধ্যম।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top